সু চি’তে মোহ হারাচ্ছে মিয়ানমারের যুবসমাজ

মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি একসময় যাদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক ‘আদর্শ নারী’ সেই তারাই এখন মোহ হারাচ্ছে তার ওপর থেকে।

>>রয়টার্স
Published : 27 Dec 2018, 04:00 PM
Updated : 27 Dec 2018, 04:00 PM

মিয়ানমারের তরুণ-যুবাদের অনেকেই এখন তাকে নিয়ে হতাশ। এমনকী সু চির এক সময়কার গোঁড়া সমর্থকরাও তার বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে।

এমনই এক তরুণী থিনজার শান লেই ই। যিনি কিনা একসময় ছিলেন অং সান সু চির মহা ভক্ত। আজ তিনিই সু চির সবচেয়ে স্পষ্টভাষী সমালোচক।

২৭ বছর বয়সী লেই উদারনৈতিক একটি গোষ্ঠীর অধিকার কর্মী এবং টিভি তে একটি ‘টক শো’ এর হোস্ট। তিনবছর আগে আকাশ ছোঁয়া যে আশা নিয়ে সু চিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, সেই নেত্রীর প্রশাসন নিয়ে এখন দিন দিনই মোহভঙ্গ হচ্ছে তার।

হতাশার সুরে লেইয়ের ভাষ্য, “আমি আমার আদর্শকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি দ্বিধাগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, হারিয়ে গেছি।”

“মিয়ানমারের তরুণ সমাজের বেশিরভাগের মনেই এখন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এরপর কি? কি ঘটবে? আমরা কি করতে পারি? অং সান সু চি তো এখন তার নিজস্ব পথে চলছেন। সেখানে তো কেউ নাক গলাতে পারবে না। আর তিনিও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর কথায় কান দেবেন না”, বলেন লেই।

সাধারণ বার্মিজদের মধ্যে এখনো সু চির আবেদন থাকলেও তার বিরুদ্ধে যুব আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিষয়টি সামাল দেওয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের ওপর দমনপীড়নের বিষয়টিও সু চি প্রশাসনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এতে করে বছরের পর বছর ধরে সামরিক জান্তার শাসনের পর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। দেশটিতে ২০২০ সালে সাধারণ নির্বাচন। কিন্তু কয়েকদশকের মধ্যে দেশটির প্রথম বেসামরিক সরকার এখন ক্রমেই তরুণ সমাজের সমর্থন হারাচ্ছে।

সরকার অনেক বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে এবং ভিন্নমত দমন করা কিংবা সুশীল সমাজের টুটি চিপে ধরতে ঔপনিবেশিক আমলের আইনের ব্যবহার বন্ধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির মুখপাত্র মিও নায়ুন্ত বলছেন, তরুণদের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে দল। বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা বাজেট, পেশগত প্রশিক্ষণ প্রোগামেও সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “যুবসমাজ এবং জনগণ সরকারের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারিনি, সেটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”

দেশে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৬ সালে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসেন সু চি। তখন থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযানের বিষয়টি সামাল দেওয়া নিয়ে তার প্রশাসন চাপের মুখে আছে।