জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে টানা চার সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আন্দোলন ও সহিংসতার পর ‘জাতীয় ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ ওপর জোর দিয়েছেন ফরাসী প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ।
Published : 09 Dec 2018, 02:09 PM
শনিবার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কোনো করই আমাদের জাতীয় ঐক্যকে গুড়িয়ে দিতে পারবে না। আমাদের এখন আলোচনা, কাজ ও একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সংলাপকে উৎসাহিত করতে শিগগিরই বেশকিছু ব্যবস্থা নেবেন বলেও ফিলিপ জানিয়েছেন, খবর বিবিসির।
জীবনধারণের বাড়তি ব্যয় ও জ্বালানি করের বিরুদ্ধে পথে নেমে আসা ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীদের দমাতে শনিবারও পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হয়েছে।
এ দিন প্রায় এক হাজার লোককে আটক করা হলেও সহিংসতার মাত্রা আগের সপ্তাহের তুলনায় কম ছিল।
তার সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ ।
শনিবার এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁও ‘সাহস ও অভাবনীয় দক্ষতা দেখানোয়’ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিন ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমেছিলেন বলে ধারণা ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
আন্দোলন ঠেকাতে সরকার দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ৯০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করেছিল। রাজধানী প্যারিসে মোতায়েন ৮ হাজার সদস্যের সঙ্গে ১২টি সাঁজোয়া যানও ছিল।
প্যারিসের বিক্ষোভটিই ছিল সবচেয়ে সহিংস। এখানে হাজার দশেক আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তাদের সহিংস অংশটি বাড়িঘর ও দোকানপাটের জানালা ভাঙে, গাড়িতে আগুন দেয় ও লুটপাট চালায়।
গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজগুলোতে পুলিশকে আন্দোলনকারীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে ।
বুলেটে আহতদের মধ্যে অন্তত তিন জন গণমাধ্যম কর্মী আছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৭ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাস্তেনেয়ার জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সদস্যকে মাঠে নামানো সত্বেও আন্দোলনকারীদের দমানো যায়নি। ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের। অর্থনৈতিক দুর্দশার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দরিদ্রদের তুমুল অনাস্থা আন্দোলনকে গতি দিয়েছে বলেও ধারণা তাদের।
শুক্রবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপে আন্দোলনের প্রতি ৬৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে বলে দেখা গেছে। উল্টোদিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয় কমেছে ২৩ শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর ভর করে ফ্রান্সজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
আন্দোলন এখন আর কেবল জ্বালানির বাড়তি কর কমানোর দাবিতেই আটকে নেই; ফ্রান্সের অনেক জায়গায় বেতন বৃদ্ধি, কর কমানো, পেনশন বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ বাড়ানোর দাবিও উঠেছে।
আন্দোলনকারীদের অনেকে প্রেসিডেন্টের ম্যাক্রোঁর পদত্যাগও দাবি করেছেন। অনেকে তাকে ‘ধনীদের প্রেসিডেন্ট’ হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করছেন।