শুক্রবার এ রায় ঘোষণা করা হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দোষীসাব্যস্ত দুজন হলেন দেশটির মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের ডেপুটি নুওন চে (৯২) এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান (৮৭)।
এর আগে ২০১৪ সালে একই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষীসাব্যস্ত করে খেমার রুজের এই দুই শীর্ষ নেতাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
শুক্রবার দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া (ইসিসিসি) জানায়, খেমার রুজ ‘ব্রাদার নম্বর টু’ নুওন চে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট খিউ সাম্ফানকে চ্যাম মুসলমান এবং ভিয়েনামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত করা হচ্ছে।
এই রায় খেমার রুজ শাসকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
এই ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেমার রুজ নেতাকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি। অন্যজন হলেন, কমরেড ডাচ।
পল পটের ডেপুটি নুওন চে কম্বোডিয়ার মানুষের কাছে ‘ব্রাদার টু’ নামে পরিচিত ছিলেন।
খেমার রুজের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অব কাম্পুচিয়া (সিপিকে)।
২০১১ সালে কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খেমার রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় ১৭ লাখ মানুষ নির্যাতন ও অনাহারে মারা যায় বা তাদের গণহত্যা করা হয়। যা দেশটির ওই সময়ের মোট জনসংখ্যার এক চর্তুথাংশ ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল খেমার রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। নুওন চে এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এ বিচার দেখার জন্য খেমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
খেমার রুজের শাসনামলে শহরগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। কৃষিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে খেমার রুজের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শহরের বাসিন্দাদের গ্রামে সমবায়ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করা হয়। তখন অনেকেই কাজ করতে গিয়ে মারা যান।
চারবছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রু অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়।
নুওন চে খেমার রুজ সরকারের আদর্শিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। আর খিউ সাম্ফানকে সামনে রেখেই এসবকিছু বাস্তবায়ন করা হতো।
নুওন চে ও খিউ সাম্ফানের সঙ্গে সাবেক দুই খেমার রুজ সরকারের মন্ত্রীরও বিচার শুরু হয়েছিল।
২০১৩ সালের মার্চে সাবেক খেমার রুজ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেঙ স্যারি মারা যান। আর তার স্ত্রী সাবেক সমাজমন্ত্রী লেঙ তিরিতকে বয়সজনিত কারণে ট্রাইব্যুনাল বিচারের অযোগ্য ঘোষণা করে।
এর আগে খেমার রুজ নেতা ডাচের আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রথমে তাকে ৩৫ বৎসর কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
কমরেড ডাচ নামে পরিচিত কায়েং গুয়েক এভ -এর বিরুদ্ধে একটি জেলখানার কয়েক হাজার বন্দিকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ঘটনার সময় তিনি জেলখানার একজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং ঊর্ধ্বতনদের আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন, এই আর্জি জানিয়ে তিনি ২০১১ সালের মার্চে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ৬৯ বছর বয়স্ক কমরেড ডাচের আবেদন খারিজ করে উল্টো দণ্ড বাড়িয়ে দেয়। তার কারাবাসের মেয়াদ ৩৫ বছর থেকে বাড়িয়ে আমৃত্যু কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।
কম্বোডিয়াতে ‘ইয়ার জিরো’ নামে একটি নতুন আদর্শভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন পল পট ও খেমার রুজ গেরিলারা। তাতে সভ্যতা আবার নতুন করে শুরু হবে। আগের সমাজের সব মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নতুন এক সংস্কৃতি দিয়ে শুরু হবে কম্বোডিয়া- এই ছিল তাদের আদর্শের মূল কথা। আর এই আদর্শ বাস্তবায়নের পথে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে টার্গেট হয়ে দাঁড়ান বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষকরা।