ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্র নয়: ট্রাম্পকে ম্যাক্রোঁ

টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক সমালোচনার জবাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র, আজ্ঞাবহ রাষ্ট্র নয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2018, 08:55 AM
Updated : 15 Nov 2018, 08:55 AM

বুধবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এ পাল্টা মন্তব্য করেছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির শতবর্ষ পূর্তিতে চলতি সপ্তাহেই ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখান থেকে ফিরেই মঙ্গলবার টুইটারে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে একের পর এক তীর ছোড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সেসব টুইটে জার্মানির কাছে দুটি বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের ‘প্রায় হেরে যাওয়ার’ কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। হুমকি দেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ওয়াইন শিল্প ধসিয়ে দেওয়ার। বলেন ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কথাও।

ট্রাম্প এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে আলাদা ইউরোপীয় সেনাবাহিনী বানাতে ফরাসী প্রেসিডেন্টের ইঙ্গিত নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে অবনতির বিষয়টি প্রকাশ্য হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের একের পর এক টুইটে অপমানিত হয়েছেন কি না, সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাক্রোঁ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে দুই দেশের দীর্ঘ সামরিক মিত্রতার কথা উল্লেখ করেন। 

“ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণে আমরা মিত্র ছিলাম। মিত্রদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ থাকে। মনে হয় না ফরাসীরা আমার কাছ থেকে ওই টুইটগুলোর জবাব আশা করে, আশা করে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা,” বলেন তিনি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে পরাজয়ের ধাক্কা সামলে উঠতে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতির খেলায়’ ট্রাম্প এ ধরনের মন্তব্য করেছেন বলেও ধারণা ম্যাক্রোঁর।

ম্যাক্রোঁর ইউরোপীয় সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ট্রাম্পকে ক্রুদ্ধ করার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে ‘কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি’ চলছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফরাসী প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন মিত্র হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ।

“যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঐতিহাসিক মিত্র এবং এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তারা সেই মিত্র যাদের নিয়ে আমরা সব ধরনের ঝুঁকি নিয়েছি, চালিয়েছি জটিল সব অভিযান। যদিও মিত্রতার অর্থ এই নয় যে, আমরা তাদের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্র,” বলেন তিনি।

ম্যাক্রোঁ ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শুরু হলেও এই প্রকাশ্য বিরোধ সেই অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত।  

ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে গত বছর বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে গিয়েছিলেন ট্রাম্প; চলতি বছরের শুরুতে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে ওয়াশিংটনেও স্বাগত জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

দুই সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমে ম্যাক্রোঁকে ‘অসাধারণ মানুষ’ ও ‘আমার বন্ধু’ বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও এ ‘উষ্ণ কথামালাকে’ ঘনিষ্ঠতায় রূপান্তর করতে পারেননি ম্যাক্রোঁ।

একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও তাদের শাসনামলেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ও ইউরোপ থেকে ধাতব পণ্য আমদানিতে মার্কিন শুল্ক আরোপসহ আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স পরস্পরের বিরোধিতা করে আসছে।

এসব বিরোধের ছাপ কখনোই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখাননি দুই প্রেসিডেন্ট, যা ফ্রান্স ও আমেরিকার মধ্যে আগেকার বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের সময়ও দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা করেছিল ফ্রান্স; সেসময় দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল তুমুল কথার লড়াই।

বুধবার ম্যাক্রোর প্রতিক্রিয়ায় সংযতভাব দেখা গেলেও ট্রাম্পের সমালোচনা যে দুই দেশের সম্পর্কে ‘জোরাল আঘাত’ করেছে তা বোঝা গেছে ফরাসী সরকারের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়ায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুখপাত্র বেঞ্জামিন গ্রিভয় প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহতের বর্ষপূর্তিতে ফ্রান্সের শোক পালনের সময়ে এমন টুইট ‘শিষ্টাচারবিরোধী’ বলে ইঙ্গিত করেছেন।

“গতকাল ছিল ১৩ নভেম্বর; আমরা ১৩০ জনকে হত্যার ঘটনাটি স্মরণ করছি। আমি ইংরেজিতেই জবাব দিতে চাই। এক্ষেত্রে ‘সাধারণ শিষ্টাচার’ দেখানোই উপযুক্ত হত,” বলেছেন বেঞ্জামিন।