ছয় দশক আগে আলজেরিয়ায় কমিউনিস্ট ভাবাদর্শী এক ব্যক্তির ওপর বর্বর নির্যাতনের দায় স্বীকার করেছে ফ্রান্স।
Published : 14 Sep 2018, 01:16 PM
১৯৫৭ সালে গ্রেপ্তারের সময় আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন ২৫ বছর বয়সী মরিস অডিন।
বৃহস্পতিবার বিরল এক স্বীকারোক্তিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, অডিনকে হয় নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল কিংবা নির্যাতনের পর ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল।
ফরাসী ঔপনিবেশিক আইনে কমিউনিস্ট কর্মী অডিনের ওপর এ নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছিল বলে ম্যাক্রোঁ স্বীকার করে নেন, জানিয়েছে বিবিসি।
সাত বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আলজেরিয়া ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়।
ব্যাটল অব আলজিয়ার্সের সময় গুম হয়ে যাওয়া অডিন ছিলেন আলজেরিয়ার স্বাধীনতার দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে অবস্থান করা অল্প কয়েক ইউরোপিয়ান নাগরিকের একজন। নিখোঁজের সময় তিনি বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক ছিলেন।
বৃহস্পতিবার অডিনের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর; সেখানেই ছয় দশক আগের ওই ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে পারেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট।
যুদ্ধে আলজেরীয় ও ফ্রান্স উভয় দেশের নিখোঁজ বেসামরিক এবং সৈন্যদের স্মরণে একটি আর্কাইভেরও উদ্বোধন করার কথা তার।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আলজেরিয়া সফরের সময় উপনিবেশবাদীতাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। যদিও ২০১৭-র শেষদিকে তিনি ঔপনিবেশিক আইনে করা অপরাধের কারণে আলজেরিয়াকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রায় ১৫ লাখ আলজেরীয় মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিল বলেও অনুমান করা হয়। ফ্রান্সের সঙ্গে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ দেশদুটির সম্পর্কে যে গভীর কাল ছায়া এঁকে দিয়েছে, তার রেশ এখনও বজায় আছে বলে মন্তব্য বিবিসির। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্যারিস সেসময়কার নির্যাতন ও অত্যাচারের দায় একে একে স্বীকার করে নিচ্ছে।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলন্দ আলজেরিয়ার যুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে লড়াই করা লাখো আলজেরীয়র দায়িত্ব না নিয়ে তাদের অনেককেই যুদ্ধের পর পাল্টা আক্রমণের শিকার হতে দেওয়ার দায় স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
ফ্রান্সের হয়ে লড়াই করা ওই আলজেরীয়রা হার্কিস নামে পরিচিত ছিল। এদের অনেককে পরে ফ্রান্সেও ফেরত পাঠানো হয়েছিল, সেখানেও তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছিল বলেও মেনে নিয়েছিলেন ওলন্দ।
এর আগে আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের এক রাষ্ট্রদূতও ১৯৪৫ সালে সেতিফ ও গুয়েলমায় ফরাসী পুলিশের হত্যাযজ্ঞে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। ফরাসী বসতি স্থাপনকারীদের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় ফ্রেঞ্চ পুলিশের ওই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে অন্তত এক হাজার আলজেরীয় নিহত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
যেসব কারণকে কেন্দ্র করে ১৯৫৪ সালে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল, তার মধ্যে সেতিফ ও গুয়েলমার গণহত্যাও অন্যতম বলে ধারণা ইতিহাসবিদদের।