পাকিস্তানে ফিরে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার নওয়াজ শরিফ

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ লন্ডন থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তাদের কোথায় রাখা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 04:58 PM
Updated : 14 July 2018, 08:08 AM

পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) এই নেতা ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফ্লাইট অবতরণের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্য ওই উড়োজাহাজে প্রবেশ করেন এবং নওয়াজ ও মরিয়ম বাদে বাকি সব যাত্রীকে নেমে যেতে বলেন।

এরপর পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর তিন সদস্য তাদের গ্রেপ্তার করে পাসপোর্ট জব্দ করেন। দুজনের ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয় বিমানের ভেতরেই।

ডন লিখেছে, গ্রেপ্তারের পর একটি ভাড়া করা উড়োজাহাজে করে লাহোর বিমানবন্দর থেকে তাদের ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়।

ইসলামাবাদ বিমানবন্দরেই নওয়াজ ও তার মেয়েকে আলাদা করে ফেলে দুইটি গাড়ি বহরে করে  রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে ইসলামাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট ও জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চিকিৎসকরা তাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন।

এই সময়ে এনএবি’র আইনজীবীরা দুর্নীতি দমন আদালতে গিয়ে নওয়াজ ও মরিয়মকে আপাতত আদালতে হাজির না করার অনুমতি চান।

তাদের দাবি, দণ্ডিতদের এখনই আদালতে উপস্থাপণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

দুর্নীতি দমন আদালত তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নেন এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি দেখভালের জন্য নিয়োগ দেন।

ইসলামাবাদের প্রধান কমিশনার প্রাথমিক ভাবে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সিহালা পুলিশ ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউজকে ‘সাব জেল’ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে নওয়াজ ও মরিয়মকে রাখার নির্দেশ দেন।

কিন্তু তার পরপরই দ্বিতীয় নোটিসে ‘সিহালা সাব জেলে’ শুধুমাত্র মরিয়মকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং আগের নোটিস বাতিল করা হয়।

দ্বিতীয় নোটিসে নওয়াজের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যে কারণে তাদের আসলে কোথায় বন্দি করে রাখা হয়েছে তা নিয়ে নানা ধরনের খবর ছড়াচ্ছে।

কেউ কেউ বলছে, নওয়াজ ও মরিয়ম দুইজনই আদিয়ালা কারাগারে আছেন। আবার কেউ কেউ মরিয়মকে সিহালা রেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেছেন।

এদিকে নওয়াজের দেশে ফেরার খবরে তার দল পিএমএল-এন এর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে লাহোরের রাস্তায় নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য।

পিএমএল-এন এর বর্তমান সভাপতি শাহবাজ শরিফ একটি কভার্ড ভ্যানের ওপরে চড়ে বিমানবন্দরের পথে ওই মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিল থেকে স্লোগান শোনা যায়- ‘আমাদের ঠেকাও যদি পারো’।

কিন্তু তাদের রাস্তায় রেখেই নওয়াজ ও মরিয়মকে আকাশপথে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামাবাদে।

 

লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের একটি আদালত নওয়াজকে ১০ বছর ও তার মেয়ে মরিয়মকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়।

গত ৬ জুলাইয় ওই রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি নওয়াজকে ১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড এবং মরিয়মকে ২০ লাখ পাউন্ড জরিমানাও করা হয়। সেই সঙ্গে নওয়াজ পরিবারের লন্ডনের সব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।

অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গত কয়েক মাস ধরে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন নওয়াজ ও তার মেয়ে মরিয়ম। তাদের অনুপস্থিতিতেই আদালত ওই রায় ঘোষণা করে।

মরিয়মের স্বামী সফদর আওয়ানকেও আদালত এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনিও এখন কারাগারে রয়েছেন।

কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসা নওয়াজের পরিবার বলে আসছে, ২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে তাদের ঠেকাতেই সেনাবাহিনীর ইন্ধনে এই ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে।

বিমনবন্দরে পৌঁছানো মাত্র গ্রেপ্তার হতে পারেন জেনেও শুক্রবার লন্ডন থেকে দেশের পথে রওনা হন নওয়াজ ও মরিয়ম। আবু ধাবিতে যাত্রাবিরতির সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো পরিস্থিতির জন্যই তিনি প্রস্তুত। পাকিস্তান যে পরিণতির দিকে যাচ্ছে, তা বদলাতে তিনি দেশে ফিরছেন।

আদালত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে আজীবনের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করায় তিনি নির্বাচনের অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল) এর সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেই তিনি ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

গত বুধবার লন্ডনে এক জনসভায় নওয়াজ বলেন, “এক সময় আমরা প্রায়ই বলতাম রাষ্ট্রের ভেতর রাষ্ট্র, এখন এটা রাষ্ট্রের উপর রাষ্ট্র। যদিও আমি চোখের সামনে কারাগার দেখতে পাচ্ছি, তারপরও আমি পাকিস্তান যাচ্ছি।”

আর দেশের পথে রওনা হয়ে এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নওয়াজ বলেন, “দেশ আজ এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। আমার পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল আমি তা করছি। আমি জানি, আমার ওপর দশ বছরের কারাদণ্ড ঝুলছে; আমি জানি, আমাকে সোজা জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পাকিস্তানের মানুষকে আমি বলতে চাই- আমি এটা করছি তাদের জন্যই।”

২০১৫ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সে যুক্তরাজ্যে নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিপুল সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে।

সম্পদের বিবরণীতে ওই তথ্য গোপন করায় গতবছর জুলাই মাসে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ওই পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করলে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে। এরপর পিএমএল-এন এর নেতৃত্বে আসেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ।

এ বছর এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে আজীবন রাষ্ট্রীয় পদে অযোগ্য ঘোষণা করলে তার ক্ষমতায় ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনবার। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি।