ইরানে নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন হুমকির নিন্দা জারিফের

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ তার দেশের ওপর ‘ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে হুমকি দিয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2018, 09:36 AM
Updated : 22 May 2018, 09:36 AM

যুক্তরাষ্ট্র যে নিজেদের ‘ব্যর্থ নীতির মধ্যেই বন্দি’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেওয়া পদক্ষেপই তা দেখাচ্ছে মন্তব্য করে জারিফ বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে ওয়াশিংটনকে এর পরিণতিও ভোগ করতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘারিনিও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

২০১৫-র চুক্তি বাতিল করলে মধ্যপ্রাচ্যকে কীভাবে নিরাপদ হবে তা দেখাতে  পম্পেও ব্যর্থ হয়েছেন বলেও মন্তব্য মোঘারিনির।

তিন বছর আগে স্বাক্ষরিত তেহরানের চুক্তির ‘বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ইরান তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে ইউরোপও চুক্তিতে থাকতে বদ্ধপরিকর।

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরতে ইরানের সঙ্গে তিন বছর আগে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিতে সম্মত হয় রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স।

চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনে তেহরান, তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশেরও অনুমতি দেয়।

ইরান ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনে চলছে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা থাকার পরও চলতি মাসের শুরুতে জেসিপিওএ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েনও চলছে।

ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে হওয়া চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র ইরান থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলে সেগুলো পুনর্বহাল করা হবে বলে সোমবার হুমকি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

“ওই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে আরও নতুন ব্যবস্থা একসঙ্গে মিলে ইরানের শাসকদের ওপর ভয়াবহ অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে,” বলেন পম্পেও।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞায় ইরানের সঙ্গে সব ধরণের বাণিজ্য অনুনমোদিত ছিল। 

তেহরানের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির লাগাম টানার পাশাপাশি ইরানকে সিরিয়া থেকে তাদের বাহিনী এবং ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের দেওয়া সমর্থন প্রত্যাহার করতে হবে বলেও শর্ত দেন সাবেক এ সিআই প্রধান।

নতুন কী ধরণের নিষেধাজ্ঞা ওয়াশিংটন আরোপ করতে যাচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও পম্পেও গত সপ্তাহে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ‘কেবল শুরু’ বলেও অভিহিত করেছেন।    

ইসরায়েল পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে এবং চুক্তির অংশীদার অন্য দুই দেশ রাশিয়া ও চীনকে নিয়ে চুক্তি বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

২০১৫ সালে ইরান পরমাণু চুক্তির পর ইউরোপের অনেক ফার্ম দেশটিতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করায় ইরানে করা তাদের বিনিয়োগ বাঁচানো বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য এ দুটির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে ফার্মগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়ে বিশ্ববাজার হারাতে হতে পারে আশঙ্কায় অনেক কোম্পানি ক্ষতি স্বীকার করে হলেও এরই মধ্যে ইরান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে।

পম্পেও স্পষ্ট করেই তার ইউরোপের মিত্রদের সহায়তা পাওয়ার আশার কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে তিনি অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, মিশর, ভারত, জাপান, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তাদের এ সিদ্ধান্তে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ ইরান প্রতি বছর তাদের তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার আয় করে। ২০১৫-র আগে থাকা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়লেও চীন, রাশিয়া ও ভারতের কোম্পানিগুলো ইরানে তাদের ব্যবসা অব্যাহত রাখলে তেহরানের অর্থনীতিকে আগের মত ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে না বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

জারিফও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পুরনো অভ্যাসে প্রত্যাগমন করলেও’ তার দেশ অন্যান্য স্বাক্ষরকারী দেশের সঙ্গে মিলে চুক্তি বাঁচাতে কাজ করছে।  

মঙ্গলবার ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার বলেছেন, তার দেশকে চাপে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে ‘ঘুসি ছুড়ে দেবে’ ইরানি জনগণ।

“মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের জনগণকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে, তারা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সমর্থকদের মুখে জোরাল ঘুসি মারবে,” তেহরানভিত্তিক সারুল্লাহ রেভ্যুলেশনারি গার্ডের ডেপুটি কমান্ডার ইসমাইল কওসারি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে ইরানের লেবার নিউজ এজেন্সি।