চাঁদের অন্ধকার পিঠের দিকে আরও এক পা এগোলো চীন

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অন্ধকার পিঠে পৌঁছানোর চেষ্টায় আরও একধাপ অগ্রসর হল চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2018, 04:12 PM
Updated : 22 May 2018, 03:33 AM

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে সিচুয়ান প্রদেশ থেকে লং মার্চ-৪সি রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয় চীনের চেচিয়াও রিলে স্যাটেলাইট।

কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট চেচিয়াওকে জায়গামত বসাতে পারলে চীন চাঁদের সেই অংশে একটি  চন্দ্রযান পাঠানোর চেষ্টা করতে পারবে, যে অংশ মানুষ কখনও পৃথিবী থেকে দেখতে পায়নি।

চাঁদ যে সময়ে পৃথিবীর চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করে, সেই একই সময়ে নিজের অক্ষে একবার আবর্তিত হয় বলে পৃথিবী থেকে চাঁদের একটি পিঠই দেখতে পাওয়া যায়। আর চাঁদের ওই পিঠে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বলে পৃথিবীর মানুষের কাছে থাকে অন্ধকার।

পৃথিবীর কোনো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এখন পর্যন্ত চাঁদের ওই অন্ধকার পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারেনি যোগাযোগের জটিলতার কারণে। 

চীন সফল হলে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে চাঁদে পাঠানো যানের যোগাযোগ মাধ্যম, অর্থাৎ রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করবে চেচিয়াও স্যাটেলাইট।

চীনা ভাষায় চেচিয়াও মানে হল ‘ম্যাগপাই সেতু’। চীনা লোকগাথা অনুযায়ী, স্বর্গ থেকে বিতাড়িত এক যুগলের পুনর্মিলন ঘটাতে এক ঝাঁক ম্যাগপাই পাখি ধনুকের মত সেতু তৈরি করেছিল, আর সেটাই হল ‘ম্যাগপাই সেতু’।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উৎক্ষেপণের ২৫ মিনিট পর স্যাটেলাইটটি রকেট থেকে আলাদা হয়ে পৃথিবী-চাঁদের ট্রান্সফার অরবিটে প্রবেশ করে। পৃথিবী থেকে চার লাখ ৫৫ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কিছু দিনের মধ্যে সেটি প্রবেশ করবে চাঁদের কক্ষপথে। সেক্ষেত্রে চেচিয়াও হবে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানো পৃথিবীর প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

 

এ বছরের শেষ দিকে চাং’ই ৪ চন্দ্রযান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। পৃথিবী থেকে চাঁদে যাওয়ার সময় চাং’ই ৪ বহন করবে আলু ও ফুলের বীজ। চাঁদে কৃত্রিম পরিবেশে ওই বীজ থেকে চারা গজানোর পরীক্ষা করা হবে।

চীনের এই রিলে স্যাটেলাইট প্রকল্পের পরিচালক জাং লিহুয়াকে উদ্ধৃত করে সিনহুয়া লিখেছে, “বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দূরতম অংশের নরম মাটিতে চন্দ্রযান নামিয়ে অনুসন্ধান চালানের লক্ষ্য পূরণের পথে আমাদের এই উৎক্ষেপণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।” 

উৎক্ষেপণের আগে রকেটের সঙ্গে চেচিয়াও স্যাটেলাইট যুক্ত করার একটি ভিডিও সোমবার সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো। চীনারাও সেখানে প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। 

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মত মহাকাশজয়ী পরাশক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টায় গত এক দশকে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে চীন। ২০১৩ সালে তৃতীয় দেশ হিসেবে তারা চাঁদের বুকে সফলভাবে চন্দ্রযান নামাতে সক্ষম হয়।

চীনা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আগামী ১৫ বছরের মধ্যে চাঁদে মনুষ্য অভিযানের পরিকল্পনা করছে। দেশটির ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত এপ্রিলে তাদের পরিকল্পনার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে চাঁদের অন্ধকার পিঠে একটি ‘লুনার প্যালেস’ তৈরির কথা রয়েছে। সেই ‘চাঁদের প্রাসাদে’ বসে গবেষণা করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

চেচিয়াও স্যাটেলাইট সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে একটি রেডিও অ্যান্টেনা, যেটা মহাবিশ্বের সূচনাপর্বের রহস্য জানার চেষ্টায় সহায়ক হবে বলে চীনা বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।