বিক্ষোভকে ব্যবহার করে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ: খামেনি

আশিটিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভকে ব্যবহার করে বিদেশি শক্তি ইরানের শাসনতন্ত্র উচ্ছেদের যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2018, 07:53 AM
Updated : 10 Jan 2018, 10:56 AM

মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বৈধ একটি বিক্ষোভকে বিদ্রোহে রূপান্তর করা ইরানের শত্রুরা এ ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত প্রতিক্রিয়াও দেখবে।

খামেনির এই টুইটের পাশাপাশি ইরানি গণমাধ্যমগুলোর খবরেও বিক্ষোভ দমনে শাসকগোষ্ঠীর আত্মবিশ্বাসের কথা এসেছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ তেহরানসহ ইরানের অনেকগুলো শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। দশককালের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস এ বিক্ষোভে অন্তত ২২ জনের নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন এলাকার পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়েছে, খামেনির ছবি পুড়িয়েছে। এর মধ্যেই নিরাপত্তা রক্ষীরা সারাদেশ থেকে প্রায় হাজারখানেক বিক্ষোভকারীকে আটক করার কথাও জানিয়েছে। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়রা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বলে ধারণা বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের।

মঙ্গলবার তেহরানের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণের আরক শহরের কারাগারে আটক এক বিক্ষোভকারীর আত্মহত্যার খবর জানান কর্মকর্তারা। আগের দিনও তেহরানের এভিন কারাগারে আটক আরেক বিক্ষোভকারীর আত্মহত্যার খবর মিলেছিল।

মানবাধিকার সংগঠন ও অনেক রাজনীতিকের আশঙ্কা, নিরাপত্তারক্ষীরা ওই বিক্ষোভকারীদের আটক অবস্থাতেই হত্যা করছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

রোববার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী দেশজুড়ে বিস্তৃত বিক্ষোভ থামাতে সক্ষম হয়েছে। তার দুইদিন পর খামেনির টুইট।

“আরও একবার জাতি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও যারা যারা ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে উচ্ছেদ করতে চায় তাদের জানালো- তোমরা ব্যর্থ হয়েছ। ভবিষ্যতেও তোমরা এভাবেই ব্যর্থ হবে,” বলেন এ ধর্মীয় শীর্ষ নেতা।

বিক্ষোভের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্দোলনকারীদের প্রতি যে সমর্থন জানিয়েছিলেন তারও সমালোচনা করেন খামেনি।

“হোয়াইট হাউজের শীর্ষে যিনি বসে আছেন, তাকে যদিও খুবই অস্থির মনে হয়, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এ ধরণের চরম ও মনস্তাত্ত্বিক পর্বের উপযুক্ত প্রতিক্রিয়াও বাদ যাবে না।”

ওয়াশিংটন ও লন্ডনের পাশাপাশি খামেনি বিক্ষোভের নামে বিদ্রোহের পেছনে ইসরায়েল, নির্বাসিত ইরানিদের সংগঠন ‘পিপলস মুজাহেদিন অব ইরান’ ও মধ্যপ্রাচ্যের ‘একটি ধনী সরকারকেও’ দায়ী করেন।

‘ধনী সরকার’ বলতে তিনি সৌদি আরবকে বুঝিয়েছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। 

এদিকে জনসমক্ষে দেওয়া বিরল এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন বলেছেন, ইরানিদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতিতে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ব্যর্থতাই বিক্ষোভের কারণ। বিক্ষোভকারীরা ইরানের শাসনতন্ত্রের উচ্ছেদ চায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“ইরানেও আমাদের চোখ-কান আছে। বেশি আশা করা উচিত হবে না, তবে অর্থপূর্ণ এ বিক্ষোভেও আমি সন্তুষ্ট,” বলেন কোহেন।

দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হওয়ার ইরানের বিক্ষোভকে এর আগে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ অভিহিত করেছিলেন খামেনি; নাগরিকদের বিক্ষোভের অধিকার আছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। 

“এসব উদ্বেগ অবশ্যই নজরে নেয়া উচিত। আমাদের অবশ্যই শোনা উচিত, অবশ্যই এগুলোর উত্তর দেওয়া উচিত। আমিও দায়ী। সবারই এটা অনুসরণ করা উচিত,” বলেছিলেন তিনি।