ইরানের বিক্ষোভকারীদের পাশে থাকুন: যুক্তরাষ্ট্রকে এবাদি

ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেছেন দেশটির মানবাধিকার আইনজীবী শিরিন এবাদি।

>>রয়টার্স
Published : 5 Jan 2018, 10:38 AM
Updated : 5 Jan 2018, 10:38 AM

তিনি বলেন, “ইরান সরকার যদি ইয়েমেন, সৌদি আরব, লেবানন এবং সিরিয়ার মানবাধিকা লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলতে পারে, তাহলে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশেরও ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে।”

একই সঙ্গে তিনি বিক্ষোভকারীদের পিছু না হটারও আহ্বান জানিয়েছেন।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবাদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইরানের উপর ‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’ নয় বরং ‘রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের অনুরোধও করেছেন।

গত সপ্তাহ থেকে ইরানজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে,

যা নিয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন এবাদি।

তিনি বলেন, তেহরানের উপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ‘তা দুর্দশাগ্রস্ত ইরানিদের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনবে’।

গত বৃহস্পতিবার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি শহরে মূলত অথনৈতিক দুরবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা। পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সোমবার পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া ও ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ নিয়ে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক চাপও ইরানিদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তারা চায়, সরকার অন্যদেশের ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে মনযোগী হোক।

২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবাদি ইরানের নেতাদের কড়া সমালোচকদের অন্যতম।

বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এবাদি বলেন, ইরানের বর্তমান বিক্ষোভকে তিনি ‘শতভাগ সমর্থন’ করেন।

সরকারকে চাপে ফেলতে ইরানিদের রাজপথ না ছেড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন  চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বহু দিন ধরে স্বেচ্ছা নির্বাসিত এই মানবাধিকারকর্মী।

তিনি বলেন, “ইরানিদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল দেওয়া বন্ধ রাখা উচিত; তাদের করও দেওয়া উচিত নয়। ব্যাংক থেকে তারা অর্থ তুলে নিতে পারে।”

এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান এরই মধ্যে সরকারবিরোধী ‘অস্থিরতা দমনের’ দাবি করে বলেন, প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীর পাশপাশি তার বাহিনীও ‘বিক্ষোভ দমনে হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত আছে’।

এবাদি ইরানের পুলিশ ও রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যদেরও এ বিক্ষোভে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান।

“পুলিশ ও রেভল্যুশনারি গার্ডে থাকা সন্তানদের বলছি, তারা যেন তাদের বন্দুক নামিয়ে রাখে এবং তাদের ভাই বোনদের হত্যা না করে। দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হলে, তারাও এর সুফল পাবে।”

রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার মোহাম্মদ আলি জাফরির বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া জানান এবাদি।

“বিদ্রোহ পরাজিত হওয়ার যে দাবি তিনি করেছেন, সেটা তার মত। জনগণ এখনও রাস্তাতেই আছে। যদি তারা বাড়ি চলেও যায়, তাদের ক্ষোভ ঠিকই থাকবে। কয়েক মাস বা বছর পর বিক্ষোভ ফের দানা বাঁধবে।”

এক টুইটে ‘সঠিক সময়ে’ ইরানি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানানোর কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওবামা প্রশাসন ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির নাগরিকদের ভিসা দেওয়া সীমিত করে এনেছিল, যা সাধারণ ইরানিদের জীবনে প্রভাব ফেলেছিল বলে মন্তব্য করেন এবাদি।

“ওবামার আমলেও আমি বলেছিলাম অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ইরানে অস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ করতে পারে, যা দিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা হয়।”

সাক্ষাৎকারে এবাদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইরানের রেডিও  এবং টেলিভিশনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।

“এগুলোর মাধ্যমে তেহরান বিভিন্ন ভাষায় তাদের অন্যায্য পররাষ্ট্রনীতি এবং ঘৃণা ও মিথ্যারের বিস্তার ঘটায়।”

তেহরান চাইলেও আটকাতে পারবে না- ইরানি তরুণদের মধ্যে এমন ‘বিনামূল্যের ও দ্রুতগতির’ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সরবরাহেও বিশ্বশক্তিকে অনুরোধ করেন এবাদি।