মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ডাক

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্মূলের চলমান অভিযান থামাতে দেশটির সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2017, 11:50 AM
Updated : 18 Sept 2017, 03:14 PM

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে রোববার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি বিবৃতি দিয়েছে।

সংস্থাটির এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন বলেন, “বর্মী নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে এবং বিশ্বনেতাদের নিন্দার কোনো তোয়াক্বা করছে না।

“এখন এমন কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন বার্মার জেনারেলরা আর উপেক্ষা না করতে পারে।”

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী একটি অংশ সম্প্রতি রাখাইনের পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলা চালানোর পর পাল্টা সেনা অভিযানে ইতোমধ্যে চার লাখের বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

নৌকায় চড়ে শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

সেখানকার সেনা নির্যাতন, হত্যা ও নারী ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের মুখে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিতেও দেখা গেছে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে।

তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সু চি বলে আসছেন, রাখাইনের অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ‘ভুয়া খবর’ আসছে।

এ ভূমিকার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছেও সমালোচিত হচ্ছেন সু চি। ইতোমধ্যে তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ারও দাবি উঠেছে।

গত ২৪ অগাস্ট রাতের বিদ্রোহীদের ওই হামলার ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ ধ্রুপদী উদাহরণ হিসেবে।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতিসত্ত্বা তার দেশে কখনোই ছিল না। যারা নিজেদের রোহিঙ্গা বলছে, তারা আসলে ‘বাঙালি চরমপন্থি’।

বিদেশি সংস্থাগুলো যা বলছে তাতে কান না দিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিউ ইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আলোচনায় ‘বার্মা সংকটকে’ প্রাধান্য দিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। সেইসঙ্গে চলমান নৃশংসতার এবং মানবিক সহায়তার কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতেও দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “গুরুতর নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের সম্পদও জব্দ করতে হবে।

“সামরিক সহযোগিতা ও সেনানিয়ন্ত্রিত শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করাসহ বার্মার বিরুদ্ধে সামগ্রিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবা উচিত।”

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে হাড়িয়াখালী থেকে দলে দলে শরণার্থীরা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়িত মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের ক্ষমতা দিয়ে জাতিসংঘ তদন্তদলকে প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফেরার সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতেও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানানো হয়।