রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক মিয়ানমার সেনাপ্রধানের

রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতিসত্ত্বা মিয়ানমারে কখনোই ছিল না দাবি করে এ বিষয়ে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2017, 09:33 AM
Updated : 18 Sept 2017, 01:38 PM

তিনি বলেছেন, বিদেশি সংস্থাগুলো যা বলছে তাতে কান দেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের উচিৎ হবে না। বরং তাদের গোপন আঁতাতের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

শনিবার ডিফেন্স সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্কুলের এক ডিপ্লোমা বিতরণ অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য আসে।

দেশটির নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে দেওয়া তার বক্তব্য তার ফেইসবুক পেইজেও প্রকাশ করা হয়েছে।   

সেনা প্রধান বলেন, গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে রাখাইনে সহিংসতার ৯৩টি ঘটনা ঘটিয়েছে ‘চরমপন্থী বাঙালিরা’। বুথিডং ও মংডুতে একটি ঘাঁটি গড়ার চেষ্টায় ‘চরমপন্থী বাঙালিরা’ এই সহিংসতা ঘটায়।   

“তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করছে, যদিও ওইরকম কোনো জাতিসত্ত্বা মিয়ানমারে কখনোই ছিল না। বাঙালিদের ইস্যুটি একটি জাতীয় বিষয় এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”  

জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, “মিয়ানমারের সকল নাগরিককে তাদের দেশাত্মবোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে তাদের বাহিনীর উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। একইভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে হাতে হাত বেঁধে এগিয়ে আসতে হবে।  

“স্থানীয় নৃগোষ্ঠীগুলোকে তাদের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। রাখাইন রাজ্যের পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর মানুষকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আর এ কাজে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতা করতে হবে সশস্ত্র বাহিনীকে।”

গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনের পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে চলছে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন চলছে, যা বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট তৈরি করছে।

নানা বিষয়ে বিরোধ থাকলেও মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল এনএলডির, দেশটির সেনাবাহিনী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা একটি বিষয়ে একাট্টা, আর তা হল- রাখাইনে কয়েক শতক ধরে বসবাস করে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে তারা নিজেদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। 

এই বিদ্বেষ থেকেই যুগের পর যুগ ধরে রোহিঙ্গা নিপীড়ন চলে আসছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে ওপরও। গত কয়েক যুগ ধরে চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে বাংলাদেশে নতুন করে আর চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায়। 

রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখে ঠেকতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গাদের ওপর যা চলছে তাকে স্পষ্টভাবে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।   

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিয়ানমার যে এখনও অনেকখানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তা বেশ স্পষ্ট। আর রাখাইনে যা ঘটছে, তা সেনাবাহিনীর কারণেই ঘটছে।

মিয়ানমারের নেত্রী এখনই সেনা অভিযান বন্ধের উদ্যোগ না নিলে তা ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।