নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিআইএ-র বিভিন্ন হ্যাকিং কৌশল নিয়ে উইকিলিকস যেসব নথি প্রকাশ করেছে সেগুলো ‘নির্ভরযোগ্য’।
উইকিলিকসের কয়েক হাজার নথি মঙ্গলবার প্রকাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছরের শেষ দিক থেকে এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল বলে দাবি এই দুই কর্মকর্তার।
তাদের একজন বলেছেন, সিআইয়ের ঠিকাদারি করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সঙ্গে উইকিলিকসের সাম্প্রতিক ফাঁসের বিষয়বস্তুর যোগ আছে, তাদের কম্পিউটার, ই-মেইল এবং অন্যান্য যোগাযোগ যন্ত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার উইকিলিকসও বলেছিল, সিআইএ তাদের একটি আর্কাইভের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, যেখানে তাদের হ্যাকিং কৌশলের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
সিআইএর হয়ে কাজ করতেন এমন সব হ্যাকার ও ঠিকাদারদের মধ্যে ওই আর্কাইভটি ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদেরই কেউ উইকিলিকসকে নথি সরবরাহ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স লিখেছে, বাজেট ঘাটতির কারণে সিআইএ-র অনেক কাজ ঠিকাদারদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। সিআইএ-র সঙ্গে কাজ করছে এমন ঠিকাদারের সংখ্যা অনেক। আর অতি গোপনীয় তথ্যে অনেকের প্রবেশাধিকার থাকায় তথ্য আসলে কার হাত দিয়ে ফাঁস হয়েছে- তা বের করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, নথি ফাঁসের ঘটনায় এফবিআই ও সিআইএ উভয় প্রতিষ্ঠানই তদন্ত শুরু করবে বলে তার ধারণা।
ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, সিআইএ-র হ্যাকাররা চাইলে অ্যাপলের আইফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে; এছাড়া যেসব ডিভাইস গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেগুলো এবং অন্যান্য গেজেটে ঢুকে ব্যবহারকারীর ভয়েস ও টেক্সট মেসেজ পড়তে পারে।
সিআইএর এ বিস্তৃত হ্যাকিং কৌশলের আওতায় স্যামসাংয়ের স্মার্ট টিভিগুলোও আছে বলে উইকিলিকসের প্রকাশিত নথিতে জানা গেছে।
উইকিলিকসের কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন এমন একজন রয়টার্সকে বলেছেন, সিআইএ-র হ্যাকিং বিষয়ক এসব নথি গোপনীয়তাবিরোধী ওয়েবসাইটটির কাছে কয়েক মাস ধরেই ছিল। তারা অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে কাজ করছে।
প্রকাশিত এসব নথিতে সিআইএ-র সংবেদনশীল কর্মকৌশলের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যা গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
তাদের ভাষ্য, যে প্রতিষ্ঠানের কাজই হচ্ছে অন্যের গোপনীয় তথ্য চুরি করা, তারা এখন নিজেদের তথ্যই সামলাতে পারছে না।
উইকিলিকসের নতুন এ ‘ফাঁসের’ কারণে সিআইএ এতদিন যাদের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল তারা কৌশল বদলে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন তারা।
হোয়াইট হাউজ বলছে, সিআইএ-র তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।
উইকিলিকসের ফাঁস করা নথির বেশ কয়েকটিতে ফ্রাঙ্কফুর্টের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভেতর সিআইএ একটি হ্যাকিং হাব বসিয়েছিল- এমন ইঙ্গিত থাকায় জার্মানি জানিয়েছে তারা নথিগুলো পর্যালোচনা শুরু করেছে।
উইকিলিকসের ফাঁস নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সিআইএ। তারা বলছে, অতিরঞ্জিত গোয়েন্দা নথির সত্যতা নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।
তবে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তাদের কাজ হচ্ছে বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা যেন আমেরিকাকে সন্ত্রাসী, শত্রু দেশ ও অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়।
“দেশের ভেতর গোয়েন্দা নজরদারি করতে সিআইএর আইনি অনুমোদন নেই, এবং সেটি করাও হয় না,” বিবৃতিতে বলেছে সিআইএ।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সিনেট এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এরই মধ্যে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে কিংবা অতিদ্রুত শুরু করবে।
সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য ডায়ানে ফেইনস্টেইন বলেছেন, এ ধরণের ফাঁস ঠেকাতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
“ঠিকাদারদের দিকে আমাদের নজর আরও বাড়ানো দরকার; কারণ যদি তুমি মার্কিন গোয়েন্দা কোনো সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে চাও তবে অবশ্যই আমেরিকার প্রতি অনুগত হতে হবে, অন্যথায় তুমি কাজ করতে পারবে না,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত এ ডেমোক্রেট সিনেটর।
যেসব প্রতিষ্ঠানের যন্ত্র ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে সিআইএ এ হ্যাকিং চালিয়ে আসছিল বলে উইকিলিকসের প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, তারাও বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।