জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ছিটমহলে কোনো নিরাপদ এলাকা নেই। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
Published : 08 Nov 2024, 01:54 PM
ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে হামলা আরও জোরদার করেছে। বৃহস্পতিবার গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে তারা।
কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, আর হলেও ঘরে ফিরতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়াটার্স জানিয়েছে, গাজা সিটির একটি স্কুলের শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাসের একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। সেটা আগে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক উদ্দেশ্যে বেসামরিক স্থাপনার ব্যবহার করার অভিযোগেএনেছে ইসরায়েল। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি।
গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন অভিযানের এক মাস পর বেইত লাহিয়ার দিকে ইসরায়েলি ট্যাংক অগ্রসর হওয়ার ঘটনায় কয়েক ডজন পরিবার সেখান থেকে সরে গেছে।
বাস্তুচ্যুত এক ব্যক্তি জানান, ড্রোনগুলো তাদের মাথার ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
"জাবালিয়ায় প্রায় সব বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পর এখন তারা সর্বত্র বোমা হামলা চালাচ্ছে। রাস্তায় ও বাড়ির ভেতরে মানুষকে হত্যা করছে। সবাইকে জোর করে বের করে দিচ্ছে," একটি অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে জানিয়েছেন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইল 'জাতিগত নিধনের' পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
এদিকে বাসিন্দারা বলছেন, ৫ অক্টোবর অভিযান শুরুর পর থেকে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া বা বেইত হানুনে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসকে মোকাবেলায় বুধবার তারা জাবালিয়া এবং এর নিকটবর্তী বেইত লাহিয়া থেকে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যাওয়া লোকজনকে আর ফিরতে দেওয়া হবে না বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা অস্বীকার করেছে তারা।
"আইডিএফকে দায়ী করে গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর গাজার বাসিন্দাদেরকে তাদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে না বলেযে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুল,” বলেছে ইসরায়েল।
তারা জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ত্রাণের ৩০০ ট্রাক আশদোদ বন্দরে পৌঁছেছে এবং উত্তরে ইরেজ ক্রসিং এবং দক্ষিণে কেরেম শালোম হয়ে গাজায় পাঠানো হবে।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছিটমহলের আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ায় ইসরায়েলি গুলিতে ছয়জন এবং দক্ষিণ গাজার মিশর সীমান্তের কাছে বেইত লাহিয়ায় চারজন এবং রাফায় সাতজন নিহত হয়েছেন।
পরে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, জাবালিয়ায় মাভৌহ পরিবারের একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন লোক নিহত ও আহত হয়েছে। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেনি।
রয়টার্সের অনুরোধের জবাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত নয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জাবালিয়ায় তাদের সেনাবাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করেছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ছিটমহলে কোনো নিরাপদ এলাকা নেই। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জোরদার করবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক ফিলিস্তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বা ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের চেয়ে নিজেকে ইসরায়েলের নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন ট্রাম্প।
গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ৪৩ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।