গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ৪০ শতাংশই এসেছে ওই তিন দেশ থেকে।
Published : 01 Feb 2025, 10:35 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হচ্ছে।
ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, কানাডিয়ান তেলের উপর ১০ শতাংশের কম শুল্ক আরোপ করা হবে, যা ১৮ ফেব্রুয়ারির পরে কার্যকর হতে পারে।
ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপরও শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, এই জোট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, কানাডা ও মেক্সিকো ‘অবৈধ ফেন্টানিল’ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ওই মাদকের কারণে কোটির বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে।
ট্রাম্প বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী আসার প্রতিক্রিয়ায় এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে লেভিট বলেন, “এসব বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের নাম না নিয়ে জানুয়ারির শুরুতে চীনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং বলেছিলেন, তার দেশ বাণিজ্য উত্তেজনা নিরসনে একটি 'উইন-উইন' সমাধান খুঁজছে এবং আমদানি সম্প্রসারণে কথা ভাবছে।
বিবিসি লিখেছে, চীন, কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ৪০ শতাংশই এসেছে ওই তিন দেশ থেকে। মাত্রাতিরিক্ত নতুন শুল্কের কারণে একটি বড় বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুক্রবার বলেছেন, “এমন না যে এই পদক্ষেপ আমরা নিতে চাই; তবে তিনি যদি আগে বাড়েন, আমরাও বসে থাকব না।”
কানাডা ও মেক্সিকো ইতোমধ্যে বলেছে, তারা তাদের মত করে মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া জানাবে। পাশাপাশি তারা ওয়াশিংটনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে, সীমান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ মোকাবেলায় তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাসের বক্তব্য জানা যায়নি।
বিবিসি লিখেছে, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে তেল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হলে তা জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিদেশে উৎপাদিত পণ্যের ওপর আমদানি করই হচ্ছে এই ট্যারিফ।
তত্ত্বগতভাবে, আমদানি পণ্যে শুল্ক বসানো হলে সেগুলোর দাম বাড়ে ও মানুষ সেগুলো কম কিনে থাকে। মানুষ যাতে দেশি পণ্য কেনে এবং দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে- এমন উদ্দেশ্যেই আমদানি শুল্ক বসানো হয়।
তবে আমদানি করা জ্বালানির উপর শুল্ক আরোপ করলে তা ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের উপর চাপ তৈরি করতে পারে। কারণ তাতে সব পণ্যেরই দাম বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের তেল শোধনাগারগুলো যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল শোধন করে তার ৪০ শতাংশই আমদানি করা এবং এর বেশিরভাগই আসে কানাডা থেকে।
ট্রাম্প শুক্রবার স্বীকার করেন যে, শুল্কের খড়্গ কখনো কখনো ভোক্তাদের ওপর পড়ে এবং তার পরিকল্পনা স্বল্পমেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান মার্ক কার্নি শুক্রবার বিবিসি নিউজনাইটকে বলেন, এই শুল্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলবে।
কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে থাকা কার্নি বলেন, “তারা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে যাচ্ছে।”