কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘দুষ্কৃতকারীরা’ লুট ও সম্পত্তি ভাংচুর করতে প্রতিবাদ ছিনতাই করেছে, তাই কারফিউ জারি করা প্রয়োজন হয়েছে।
Published : 02 Aug 2024, 10:01 PM
জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় নিয়ে নাইজেরিয়াজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে দেশটির উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যে ২৪ ঘন্টব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সরকার কানো, জিগাওয়া, ইয়োবে ও কাতসিনা রাজ্যজুড়ে দিবারাত্রি কারফিউ জারি করে অঞ্চলগুলোর লাখ লাখ বাসিন্দাকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার ও প্রতিবাদে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘দুষ্কৃতকারীরা’ লুট ও সম্পত্তি ভাংচুর করতে প্রতিবাদ ছিনতাই করেছে, তাই কারফিউ জারি করা প্রয়োজন হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা ‘রাগের দিন’ কর্মসূচী ঘোষণা করার পর থেকে নয় দিনেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এ সময় দেশব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এই নয়দিনের মধ্যে প্রথম দিন উত্তরাঞ্চলীয় শহর কানোতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টায় পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছোড়ে এবং গরম পানি ছিটায়। এ সময় গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত এবং বহু আহত হন।
লুটপাটকারীরা কানোর গভর্নর হাউজের কাছে একটি গুদাম ভেঙে ২৫ লিটারের বাদাম তেলের কার্টুন ও অন্যান্য সামগ্রী লুট করে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার পর থেকে ২৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করে লুট হওয়া অনেক মালামাল উদ্ধার করেছে তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, প্রতিবাদের প্রথম দিন নাইজেরিয়াজুড়ে ১৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
উত্তরাঞ্চলীয় চার রাজ্যের আরেক প্রতিবেশী বর্নো রাজ্য বৃহস্পতিবারই দিবারাত্রি কারফিউ জারি করে। তবে রাজ্যটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে প্রাণঘাতী এক বোমা হামলার কারণে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে গ্রামীণ বাজার কায়োরির এক চায়ের দোকানে বিস্ফোরণে ১৬ জন নিহত হন।
এ ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন, তাদের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে স্থানীয়দের ধারণা, এটা জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের কাজ। এ গোষ্ঠীটি ২০০৯ সাল থেকে নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলজুড়ে তৎপরতা চালিয়ে আসছে।
যাইহোক, কর্তৃপক্ষ ওই বোমা হামলাকে কারফিউ জারির কারণ হিসেবে দেখালেও এই বিধিনিষেধ জারি করা হয় বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে বর্নোর রাজধানী মাইদুগুরির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, নাইজেরিয়ার সারা দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। নাইজেরিয়ার আন্দোলনকারীরা কেনিয়ার বিক্ষোভকারীদের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই বিক্ষোভের ডাক দেয়। সম্প্রতি কেনিয়ার বিক্ষোভকারীরা সরকারকে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছে।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বৃহস্পতিবার দিনের বিক্ষোভ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ থাকলেও শুধু রাজধানী আবুজায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে। এ অঞ্চলের বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা ক্ষুধার্ত’ বলে শ্লোগান দেন।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু ২০২৩ সালের মে-তে অভিষেক ভাষণ দেওয়ার সময়ই জ্বালানির ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। সরকারি ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এতে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, যার প্রভাব খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের ওপরও পড়ে।
এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হন। জ্বালানির মূল্য কমানো ছাড়াও বিক্ষোভকারীরা দেশটির বিচার ও নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন।