২০০ শতাংশ শুল্ক বসালে যুক্তরাষ্ট্রের মদের দোকানগুলোতে সম্ভবত ফ্রেঞ্চ ওয়াইন আর দেখাই যাবে না, বলেছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জাস্টিন উলফারস।
Published : 14 Mar 2025, 03:10 PM
অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে মার্কিন শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে তা রদ না করলে তাদের মদে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, বুধবার ইইউ মার্কিন মদে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর যে ঘোষণা দিয়েছে অবিলম্বে তা রদ করা না হলে যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে আসা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়র ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
“যদি এই শুল্ক অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা না হয়, তাহলে ফ্রান্স ও ইইউর প্রতিনিধিত্ব করা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত মদ, শ্যাম্পেন ও অন্যান্য অ্যালকোহলিক পণ্যে শিগগিরই ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি আমাদের ওয়াইন ও শ্যাম্পেন শিল্পের জন্য দারুণ হবে,” মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ২৫ শতাংশ শুল্ক বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে, যাকে ‘অন্যায্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে সেদিনই ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসায় ইইউ। এই পাল্টা শুল্ক এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
এদিকে ট্রাম্পের হুমকির মুখে মাথা নত না করার অঙ্গীকার করেছেন ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী লরঁ সাঁ-মারতাঁ।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ওয়াইন রপ্তানিকারক দেশ ফ্রান্স। গত বছর তারা ট্রাম্পের দেশে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের ওয়াইনই বেচেছে, বলছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। ইতালি রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মদ।
“ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়িয়ে তুলছেন, এটি তিনিই শুরুই করেছিলেন। ফ্রান্স পাল্টা জবাব দেবে। আমরা হুমকির সামনে মাথা নত করব না, নিজেদের শিল্প রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বলেছেন ফরাসী বাণিজ্যমন্ত্রী।
ইইউ কমিশনের বাণিজ্য বিষয়ক মুখপাত্র অলফ গিল যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা আলোচনায় বসতে চাই, ভবিষ্যতে শুল্ক এড়াতে চাই। এই শুল্কের লড়াইয়ে সবাই হারতে যাচ্ছে, আমরা উইন-উইন ফলাফলে নজর দিতে চাই।”
যুক্তরাষ্ট্রে ইইউ যেসব পণ্য পাঠায় তার মধ্যে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের স্থান উপরের দিকে। ২০২৩ সালে কেবল ফ্রান্সই যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ৭০ লাখ বোতল শ্যাম্পেন রপ্তানি করেছে, বলেছে এ খাত সংক্রান্ত ব্যবসায়িক সংঘ কোমিতে শাঁপানে।
বৃহস্পতিবার আইরিশ হুইস্কি অ্যাসোসিয়েশনও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “শুল্ক আরোপের ফলে চাকরি, বিনিয়োগ ও ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।”
২০০ শতাংশ শুল্ক বসালে যুক্তরাষ্ট্রের মদের দোকানগুলোতে সম্ভবত ফ্রেঞ্চ ওয়াইন আর দেখাই যাবে না, বলেছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জাস্টিন উলফারস।
বুধবার ওভাল অফিসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ইইউর পাল্টা শুল্কের কড়া জবাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
“অবশ্যই আমি এর জবাব দেব,” বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক বসালে ইইউ তার পাল্টায়ও শুল্ক বসাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ধরনের পাল্টাপাল্টি শুল্কে বৈশ্বিক বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
তবে ট্রাম্প বলছেন, তিনি যে শুল্ক আরোপ করেছেন, শিগগিরই তা তুলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শুল্কের পাল্টায় এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে ট্রাম্প আরও শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তেমনটা হলে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ট্রাম্পের হুমকি অবশ্য সেসব মানছে না।
“যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মুক্ত বাণিজ্য নেই, আমাদের আছে ‘বোকার বাণিজ্য’। সমগ্র বিশ্ব আমাদের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে,” বৃহস্পতিবার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন তিনি।
অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাতে ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর, পাল্টা ব্যবস্থা ইইউ'র