এবার ৫ কোটি ৯২ লাখ জার্মান ভোট দেওয়ার যোগ্য হলেও অনেকে এরই মধ্যে ডাকযোগে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন।
Published : 23 Feb 2025, 03:19 PM
পড়তে থাকা অর্থনীতি আর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন জার্মানরা আগাম সাধারণ নির্বাচনে তাদের রায় জানাচ্ছে।
রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ ভোটের দিকে ইউরোপ এমনকী যুক্তরাষ্ট্রও অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এবারের নির্বাচনী প্রচারজুড়ে অভিবাসন আর নিরাপত্তাই প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।
ভোটে রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিইউ) শেষ পর্যন্ত চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের (এসপিডি) সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শলৎজের জোট সরকার গত বছরের শেষদিকে আস্থা ভোটে পরাজিত হওয়ায় এ আগাম সাধারণ নির্বাচন করতে হচ্ছে।
সিডিইউ-র নেতা ফ্রিদরিখ মার্জ বলেছেন, তিনি চ্যান্সেলর হলে আগামী চারবছরের মধ্যেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটির বেশিরভাগ সংকটের সমাধান করবেন।
কোনো অবস্থাতেই কট্টর ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সঙ্গে জোট করবেন না বলেও আশ্বস্ত করেছেন ৬৯ বছর বয়সী এ রাজনীতিক।
শলৎজের মধ্য-বামপন্থি দলকে পেছনে ফেলে ভোটে এবার অভিবাসনবিরোধী এএফডি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
এবার ৫ কোটি ৯২ লাখ জার্মান ভোট দেওয়ার যোগ্য হলেও অনেকে এরই মধ্যে ডাকযোগে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন।
নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত ২০ শতাংশ ভোটার এখনও কাকে ভোট দেবেন তা ঠিক করে উঠতে পারেননি বলে একাধিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত; গণনা শুরুর পর সন্ধ্যার দিক থেকেই কার পাল্লা ভারী তা বোঝা যাবে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রধান প্রধান দলগুলো ভোটারদের মন যোগাতে প্রচার চালিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হয়েছে চূড়ান্ত বিতর্ক, এ নিয়ে চলতি মাসেই এ ধরনের ৯টি বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়।
জার্মানির জন্য এবারের নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, সামনে তাদেরকে দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই বিশ্ব মঞ্চেও বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মার্জ ইউরোপের শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, এদিকে প্রতিরক্ষা বাজেটের লাগামে ঢিল দিতেও বার্লিনের ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে।
ইউক্রেইনকে সামরিক সাহায্য দেওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম এ দেশের নতুন সরকারকে তাল মেলাতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে, যিনি ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলছেন স্বৈরাচার আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এরই মধ্য টলিয়ে দিয়েছেন।
জার্মান রাজনীতিকরা সম্প্রতি আরও একটি ধাক্কা খেয়েছেন, যখন দেখেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স চ্যান্সেলর পদে এএফডির প্রার্থী এলিস ভাইডেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ভ্যান্স এখানেই থামেননি, ডানপন্থিদের নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের যে ট্যাবু রয়েছে তার অবসানে জার্মান ভোটারদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
এদিকে মার্জকে নিয়েও অনেকের শঙ্কা আছে। রক্ষণশীল এ নেতা এএফডির সঙ্গে জোটে যাবেন না বলে বারবার অঙ্গীকার করলেও গত মাসে পার্লামেন্টে তাদের সমর্থন নিয়ে অনেকের চোখই কপালে তুলে দিয়েছেন।
এএফডি জার্মানির বেশ কয়েকটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে বেশ জনপ্রিয়, পশ্চিমেও তাদের জনসমর্থন বাড়ছে।
টিকটককে কাজে লাগিয়ে তারা তরুণদের মধ্যে অবস্থান পোক্ত করেছে। ভাইডেলের নির্বাচনী প্রচারের একটি ভিডিও ৪০ লাখ বারও দেখা হয়েছে।
তার বার্তা খুবই সরল, সাদামাটা- এএফডিকে ভোট দিন, বাধা টপকান, জার্মান রাজনীতি বদলে দিন।
এএফডি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জার্মানিকে প্রত্যাহার, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পদক্ষেপ বাতিল, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, রুশ গ্যাস সংযোগ মেরামত ও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত বছরের মে থেকে এ পর্যন্ত জার্মানিতে হওয়া ৫টি প্রাণঘাতী হামলার পর অভিবাসন ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তাদের অবস্থানও ভোটারদের নজর কেড়েছে। এই সবগুলো হামলাতেই অভিবাসীদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে বার্লিনের হলোকস্ট জাদুঘরে এক ছুরি হামলার ঘটনায় পুলিশ এক সিরীয়কে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিহিত করেছে। ইহুদিবিদ্বেষের কারণে এ হামলা হয়েছে বলেও দাবি করছে তারা।
এএফডি চাইছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে।
তাদের এই ‘রিমাইগ্রেশন’ কর্মসূচি অভিবাসী ও বংশধরদের ওপর দমনপীড়নে ব্যবহৃত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
জার্মান পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ৬৩০, এএফডি এবার দেড়শর বেশি আসন পেতে পারে বলে জনমত জরিপগুলোতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এবারের ভোটে উদারবাদী ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি) ও বামধারার জনতুষ্টিবাদী বিএসডব্লিউর ভরাডুবি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কট্টর বাম লেফট পার্টির পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এবার তারা পার্লামেন্টে পঞ্চম বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, তাদের উপরে থাকতে পারে গ্রিন পার্টি, বলছে একাধিক জনমত জরিপ।
জার্মানির নির্বাচন: কট্টর ডানপন্থিদের প্রবল উত্থান নিয়ে শঙ্কা