প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব শর্ত মেনে নিয়েছে কলম্বিয়া সরকার, বলছে হোয়াইট হাউজ।
Published : 27 Jan 2025, 11:55 AM
মার্কিন সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজে করে কলম্বিয়ার অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের যে পরিকল্পনা করেছিল ওয়াশিংটন, বোগোতা শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
রয়টার্স লিখেছে, রোববারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে পিছু হটেছে দেশ দুটি।
এর আগে অভিবাসীবাহী সামরিক ফ্লাইট অবতরণে কলম্বিয়া অস্বীকৃতি জানালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
পরে রোববার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, শেষ পর্যন্ত অভিবাসী প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে কলম্বিয়া। সে কারণে ওয়াশিংটন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব শর্ত মেনে নিয়েছে কলম্বিয়া সরকার, যার মধ্য দিয়ে মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজে করে কলম্বিয়া থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন রয়েছে বিলম্ব ছাড়াই।”
কলম্বিয়া যতক্ষণ এই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে, ততক্ষণ তাদের ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের খসড়া আদেশগুলো 'সংরক্ষিত থাকবে’ বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে।
রোববার দিনের শেষে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস গিলবার্টো মুরিলো বলেন, “আমরা মার্কিন সরকারের সঙ্গে অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠেছি।
"আজ সকালে কলম্বিয়ার যেসব নাগরিক প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে দেশে পৌঁছাতে চান, তাদের সুবিধার্থে প্রেসিডেন্টের বিমান প্রস্তুত রয়েছে।”
রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ক্ষেত্রে সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ছিল, যা এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি কলম্বিয়া সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ভিসা বাতিল এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা ছিল খসড়ায়।
ট্রাম্প এও হুমকি দিয়েছিলেন, কলম্বিয়ার নাগরিক ও পণ্যের ক্ষেত্রে বাড়তি তল্লাশির নির্দেশনা দেবেন তিনি।
লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কলম্বিয়া, আর যুক্তরাষ্ট্রই কলম্বিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।
এর আগে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো অভিবাসী বহনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ফ্লাইট ব্যবহার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, হাতকড়া পরা আমেরিকানদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে তিনি কখনোই অভিযান চালাবেন না।
সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, “আমরা নাৎসিদের বিপরীত।”
তবে তিনি এও বলেছিলেন, বিতাড়িত অভিবাসীদের বেসামরিক বিমানে দেশে পাঠানো হলে স্বাগত জানাবে কলম্বিয়া। তাদের ‘সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন’ এর জন্য তিনি তার প্রেসিডেনসিয়াল উড়োজাহাজ ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।
বিবিসি লিখেছে, পেত্রো দাবি করেছেন, ১৫ হাজার ৬৬৬ জন আমেরিকান অবৈধভাবে কলম্বিয়ায় আছেন।
ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং গত সোমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হয়েছে।
তিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সীমান্ত সুরক্ষায় সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ভিনদেশিদের আশ্রয় প্রশ্নে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম দেওয়া অবৈধ অভিবাসীর সন্তানকে নাগরিকত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে অভিবাসীদের বহনকারী একটি মার্কিন সামরিক বিমানকে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে মেক্সিকো।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন, যাতে অবৈধ অভিবাসী ও যুক্তরাষ্ট্রে আসা ‘ফেন্টানিলের’ বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।