ইরানে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড বন্ধে কারাগারের সামনে বিক্ষোভ

গত ডিসেম্বর মাস থেকে একে একে চার বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2023, 06:02 PM
Updated : 9 Jan 2023, 06:02 PM

এরইমধ্যে চার বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। আরো দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির একটি কারাগারের সামনে রাতভর প্রতিবাদ জানিয়েছেন একদল সাধারণ মানুষ।

নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে গত সেপ্টেম্বর মাসে ইরান জুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল তা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে।

ওই সময় বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয়ে উঠেছিল ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী।

বিক্ষোভকারীদের দিকে নির্বিচারে গুলি চালানোর পাশপাশি অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে আদালতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা বা গুরুতর জখম এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার মত অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাদের অনেকেই বিচারে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন।

এভাবে তাড়াহুড়ো করে সাজা দেওয়াকে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ বলেছে আন্তর্জাতিক নানা মানবাধিকার সংগঠন। ইরান কর্তৃপক্ষকে এসব বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে অনেকে।

কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে ইরান কৃর্তপক্ষ গত ডিসেম্বর মাস থেকে সাজা কার্যকর করা শুরু করে। এরইমধ্যে চার বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কারাজ নগরীতে রাজাই শাহর কারাগারে আরো দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লোকজন কারাগারের সামনে জড়ো হয়ে তাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়।

ইরানের সরকারবিরোধী কয়েকজন কর্মী বিক্ষোভের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন বলে জানায় বিবিসি।

যে দুইজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে ‍তাদের একজন মোহাম্মদ গুবাদলু। তার মা কারাগারের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের শান্ত হতে অনুরোধ করেছেন।

এর আগে যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তাদের মধ্যে ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে মোহসেন শেকারি ও মাজিদ রেজা রেহনাভার্দ নামে দুই বিক্ষোভকারীকে জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাদের উভয়ের বয়সই ছিল ২৩ বছর।

মোহসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি গত সেপ্টেম্বরে তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বড় ছোরা দিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে আঘাত করেছিলেন।

আর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার অভিযোগে মাজিদ রেজাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

আর গত শনিবার ফাঁসি দেওয়া দুইজন হলেন মোহাম্মদ মাহদি কারামি এবং সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেইনি। বিক্ষোভের সময় ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার অভিযোগে তাদের দোষীসাব্যস্ত ক‍রা হয়।

ইরানে নারীদের জন্য থাকা কঠোর পোশাকবিধি ঠিকঠাক না মানার অভিযোগে আটক ২২ বছরের তরুণী মাশাকে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আটকের পর পুলিশি হেফাজতে তিনি মারা গেলে তার দাফনের দিন থেকে তার শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। যা কয়েকদিনের মধ্যে ইরানজুড়ে ইসলামিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভে রূপ নয়।

বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৫১৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি-এইচআরএএনএ।

নিহতদের মধ্যে ৭০ জন শিশু। আরো ১৯ হাজার ২৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৮ সদস্য নিহত হয়েছে বলেও জানায় এইচআরএএনএ।