১৪০ বছর আগে ভারতে তৈরি হয় বড়দিনের প্রথম কেক

ভারতের ব্যবসায়ী প্রকাশ মামবালি বিবিসি-কে শুনিয়েছেন ভারতীয় উপমহাদেশে বড়দিনের প্রথম কেক তৈরির গল্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2022, 06:15 PM
Updated : 25 Dec 2022, 06:15 PM

বড়দিন মানেই কেক। জন্মদিন মানেই কেক। এমনকী নানা উৎসব আয়োজনেও এখন কেক অবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে কখন হয়েছিল বড়দিনের কেকের প্রচলন? সময়টা ১৪০ বছর আগে।

এমনটাই দাবি করেছেন ভারতের ব্যবসায়ী প্রকাশ মামবালি। তিনি বিবিসি-কে শুনিয়েছেন ভারতে প্রথম বড়দিনের কেক তৈরির গল্প। যিনি ওই কেকটি তৈরি করেছিলেন তার ভাগ্নের নাতি এই প্রকাশ মামবালি।

তিনি বলেন, ভারতে বড়দিনের প্রথম কেকটি তৈরি হয় ১৮৮৩ সালে। যার ফরমায়েশ দিয়েছিলেন স্কটিশ মশলা ব্যবসায়ী মারডক ব্রাউন।

১৮৮৩ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। ভারতে তখন চলছে ব্রিটিশ শাসন। বর্তমান দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে ‘রয়্যাল বিস্কুট ফ্যাক্টরি’ নামে একটি বেকারির মালিক ছিলেন মামবালি বাপু নামের এক ভারতীয় ব্যবসায়ী।

একদিন মারডক ব্রাউন মামবালি বাপুর দোকানে গিয়ে তিনি বড়দিনের কেক বানাতে পারবেন কি না জানতে চান। সুদূর ব্রিটেন থেকে নিয়ে আসা একটি কেক দেখিয়ে সেটা বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বাপুকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্রাউন। তখনকার মালাবার রাজ্যে বিশাল দারুচিনি বাগান ছিল ব্রাউনের।

বাপু তখন কেবল রুটি আর বিস্কুট বানানো জানেন। যা তিনি শিখেছিলেন মিয়ানমার (বার্মা) থেকে। ব্রাউনের দেখানো কেকের প্রস্তুত প্রণালী আর নিজের রুটি-বিস্কুট বানানোর অভিজ্ঞতা সম্বল করেই কাজে নেমে পড়েন বাপু।

তিনি কেক তৈরির রেসিপিতে কিছু পরিবর্তনও আনেন। যেমন, ব্র্যান্ডির বদলে ব্যবহার করলেন কাজুবাদাম।

দিনশেষে পুরোপুরি দেশীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হল অভিনব এক কেক। যেটির নাম দেওয়া হল ‘প্লাম কেক’।

কেক খেয়ে ব্রাউন সাহেব দারুণ খুশি। দিয়ে দিলেন আরো ডজনখানেক কেকের অর্ডার।

প্রকাশ মামবালি বলেন, ‘‘এবং এভাবেই ভারতে তৈরি হয় বড়দিনের প্রথম কেক।”

যদিও এ দাবির পক্ষে তার কাছে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো নথিপত্র নেই বলে জানায় বিবিসি।

কিন্তু মামবালি বাপুর বেকারি আজও মর্যাদার সঙ্গে টিকে আছে, কেরালার থালেসেরি এলাকায় তাদের ব্যবসাও জমজমাট।

ভারতে বড়দিন পালনে ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন এটি পরিচিত ‘মামবালিস বেকারি’ নামে।

চার প্রজন্ম ধরে মামবালি বাপুর উত্তরাধিকারীরা তাদের পূর্বপুরুষের প্রথম কেক বানানোর গল্প বলে আসছেন।

প্রকাশ বলেন, ‘‘মামবালি বাপু ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশদের সুস্বাদু এই খাবারটি জনপ্রিয় করে তুলেছেন। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ সেনাদের জন্য কেক ও মিষ্টি তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন।’’

পরে মামবালি পরিবার বিভিন্ন নামে ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি আউটলেট খোলেন।

তাদের মূল বেকারি এখনো থালাসেরিতে, যেটি পরিচালনা করছেন প্রকাশ মামবালি। তার দাদা গোপাল মামবালি তার মায়ের উত্তরাধিকারসূত্রে নানা বাড়ি থেকে ওই দোকানের মালিক হন। ওই সময়ে কেরালাতে এটাই নিয়ম ছিল।

গোপাল মামবালির ১১ ছেলেমেয়ের সবাই পরিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন।

আগের রেসিপিতেই কেক বানালেও তারা এখন কেকের স্বাদবদলের জন্য নতুন নতুন ‘ফ্লেভার’ যোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের কেক বানিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছে তাদের বেকারি।

প্রকাশ মামবালি বলেন, ‘‘নতুন ফ্লেভার যোগ করলেও আমরা কেক তৈরির ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়াটি খুবই কঠোরভাবে অনুসরণ করি। যাতে কেকের গুণগত মানে কোনো হেরফের না হয়।”

প্রকাশের স্ত্রী লিজি বলেন, শুধু কেরালাতেই নয়, প্লাম কেকের চাহিদা পুরো দেশজুড়েই। বড়দিন আসার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্লাম কেকের অর্ডার আসে। বেশিরভাগ অর্ডার মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরু থেকে আসে বলেও জানান তিনি।

লিজি আরও বলেন, ‘‘নভেম্বর মাস থেকেই বড়দিনের কেক তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় প্লাম কেক পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”