চীনের ‘অর্থনৈতিক জবরদস্তির’ বিরুদ্ধে একজোট জি৭ নেতারা

জাপানের ঐতিহাসিক নগরী হিরোশিমায় তিন দিন ধরে চলছে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের সম্মেলন। রোববার সম্মেলনের শেষ দিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 04:23 PM
Updated : 21 May 2023, 04:23 PM

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুধু রাশিয়াকেই কঠোর বার্তা দেননি জি৭ নেতারা। বরং এবারের সম্মেলনে চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে চীন ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং যত দিন যাচ্ছে ‘চীন সরকার দেশে এবং বিদেশে তত কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে।

জাপানের ঐতিহাসিক নগরী হিরোশিমায় তিন দিন ধরে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের সম্মেলন। রোববার সম্মেলনের শেষ দিন।

এবারের সম্মেলনে মূল আলচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন।

সম্মেলনের শেষ দিনে দুইটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এবং দুইটিতেই ইন্দো-প্যাসিফিক এবং তাইওয়ানের মতো বিভাজনমূলক ইস্যুতে তাদের অবস্থান সম্পর্কে বেইজিংকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।

তবে তাদের দুটো বিবৃতিতেই যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সেটি হলো চীনের ‘অর্থনৈতিক জরবদস্তি’।

জি৭ এর জন্য যেটা অত্যন্ত সুচারুভাবে ভারসাম্যের বিষয়। নানা বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল। এদিকে, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে এবং মানবাধিকারসহ বেশি কিছু বিষয়ে চীনের সঙ্গে তাদের প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।

এখন তারা চীনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে হয় কিনা সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যারা তাদের অসন্তুষ্ট করছে সেসব দেশের উপর নির্ভয়ে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে চীন।

অতিসম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি বেইজিং।

বিশেষ করে চীন লিথুয়ানিয়ার রপ্তানিতে যে অবরোধ আরোপ করেছে সেটা নিশ্চিতভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য সতর্কবার্তা। বাল্টিক দেশটি তাইওয়ানকে সেখানে দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি দিয়ে বেইজিংয়ের রোষানলে পড়েছে।

বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবেই দেখে, স্বশাসিত দ্বীপটি এক সময় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পুনরেকত্রিত হবে বলেই তাদের আশা।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসিত তাইওয়ানের কারণেই চীন তাদের পররাষ্ট্রে ‘এক চীন নীতি’ অনুসরণ করে আসছে।

চীনের এভাবে ‘অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারকে’ জি৭ নেতারা দেশটির ‘বিরক্তিকর উত্থান’ বলে মনে করছেন।

তারা বলছেন, এই জবরদস্তির মাধ্যমে (চীন) ‘জি৭ সদস্যদের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অংশীদারদের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীন নীতি ও অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করতে চায়’।

এজন্য তারা ‘ঝুঁকি কমানোর’ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে সমর্থন দিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন।

চীনের ‘অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ প্রতিরোধে তারা একটি ‘সমন্বিত উদ্যোগের’ ঘোষণাও দিয়েছে। যদিও এটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তবে খুব সম্ভবত দেশগুলি চীনের আরোপ করা যে কোনো বাধা মোকাবেলায় বাণিজ্য বা তহবিল বৃদ্ধি করে একে অপরকে সাহায্য করবে।

এছাড়াও জি৭ দেশগুলি খনিজ এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করেছে। তারা হ্যাকিং এবং প্রযুক্তি চুরি প্রতিরোধে ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করবে।