ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল: সানা মারিন

অস্ত্র উৎপাদনসহ নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে ইউরোপের অনেক কিছু করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 07:43 AM
Updated : 3 Dec 2022, 07:43 AM

ইউরোপ তার নিজের নিরাপত্তার জন্যও যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনেই তার প্রমাণ মিলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন।

অস্ট্রেলিয়া সফরকালে শুক্রবার সিডনিতে এক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

এ সময় মারিন ইউরোপকে অস্ত্র উৎপাদনসহ নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে তাগিদ দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

 “আমার উচিত আপনাদেরকে নির্মম সত্যটা বলা। ইউরোপ এখন মোটেও যথেষ্ট শক্তিশালী না। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া আমরা বিপদে পড়বো,” লোয়ি ইনস্টিটিউটে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

ফিনল্যান্ড সম্প্রতি প্রতিবেশী সুইডেনের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে; যা অনুমোদিত হতে নেটোর সব সদস্য দেশের সমর্থন লাগবে।

বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেইনে এখন পর্যন্ত যত সামরিক সহায়তা গেছে, তার সিংহভাগই যুক্তরাষ্ট্রের।

ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত কিইভকে ১৮৬০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বলে গত মাসে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক গবেষণা ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমির কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেইনকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ); এরপরই আছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু তাদের সাহায্যের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক কম। 

এদিকে ইউক্রেইনে অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মজুদেও টান পড়ছে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই মারিন বলেছেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষা জোরদারে অনেক কিছু করা দরকার।

“যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনকে বিপুল অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে, ব্যাপক আর্থিক সহায়তা, ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ এখনও শক্তিশালী নয়।

“যখন ইউরোপের প্রতিরক্ষা, ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতের প্রসঙ্গ আসে, তখন সে সক্ষমতা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত ইউরোপের, নিশ্চিত করা দরকার যেন আমরা ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গেও মানিয়ে নিতে পারি,” বলেছেন তিনি।

মারিন তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইউরোপের কিছু দেশের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টারও সমালোচনা করেছেন।

“দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ রাশিয়ার ব্যাপারে একটি কৌশল তৈরি করছিল, সেটি হচ্ছে- রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনা এবং তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। আমরা ভেবেছিলাম, এটি যুদ্ধ ঠেকাবে। কিন্তু এ দৃষ্টিভঙ্গী পুরোপুরি ভূল প্রমাণিত হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইইউভুক্ত এবং নেটোর সদস্য অনেক দেশই নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।  

ফেব্রুয়ারিতে জার্মানি তাদের সেনাবাহিনীর পেছনে অতিরিক্ত ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার খরচের ঘোষণা দেয়। জিডিপির ২ শতাংশ নেটোর সামরিক ব্যয়ে বরাদ্দে সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি পূরণেরও অঙ্গীকার করে।

বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জুনে যুক্তরাজ্য জানায়, এই দশকের শেষ নাগাদ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির আড়াই শতাংশে পৌঁছাবে।

জোটের সমরপ্রস্তুতি নিশ্চিতে সব নেটো সদস্যকেই তাদের জিডিপির ন্যূনতম ২ শতাংশ ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, বলেছে নেটো। সম্প্রতি এই ব্যয় জিডিপির ৩ শতাংশ করারও আহ্বান উঠছে।

সম্প্রতি হেলসিঙ্কিতে দেওয়া এক বক্তৃতায় মারিন বলেছিলেন, ইউরোপ বর্তমানে প্রযুক্তি খাতে চীনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ নির্ভরশীলতা কাটাতে ইউরোপের উচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো খাতগুলোতে বেশি বিনিয়োগ করা।

আরও পড়ুন:

Also Read: রাশিয়ার তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে বেঁধে দিল জি৭

Also Read: ইউরোপজুড়ে ইউক্রেইনের দূতাবাসে ‘রক্ত ভেজা’ উড়ো পার্সেল

Also Read: শান্তি আলোচনার আগে ‘নতুন অঞ্চলগুলোর’ স্বীকৃতি চায় রাশিয়া

Also Read: ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানে পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত বাইডেন

Also Read: ফ্রান্স ‘এই শীতে ডুবতে পারে অন্ধকারে’