কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হলে এক শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের মরদেহ মেলে।
Published : 12 Aug 2024, 06:30 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবীশ এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। ভারতজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডি টিভি জানায়, কলকাতাসহ মুম্বাই এমনকী রাজধানী দিল্লি ও অন্যান্য আরও কয়েকটি নগরীতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে।
খুনের ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সব চিকিৎসা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর সরকারি হাসপাতালের সেমিনার হলে ৩২ বছর বয়সী ওই নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে।
দায়িত্বে থাকা অবস্থায় শিক্ষানবীশ ওই চিকিৎসক এ ঘটনার শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সঞ্জয় রায় নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এই সঞ্জয় রায় পেশায় একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। তিনি কলকাতা পুলিশের অধীনেই কাজ করেন। পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতালে রোগী ভর্তি এবং তাদের দেখাশোনার কাজও করতেন তিনি।
ঘটনার দিন গভীর রাতে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছিল হাসপাতালে চারতলার সেমিনার হলের আশেপাশে। এই সেমিনার হল থেকেই নারী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই চিকিৎসক ঘটনার রাতে একটি ফুড ডেলিভারি সংস্থা থেকে খারাব অর্ডার করেন রাত ১১টা নাগাদ। খাবার খেয়ে তিনি সেমিনার হলে গিয়েছিলেন বিশ্রাম নিতে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ঘটনার তদন্ত "স্বচ্ছ" বলে দাবি করেছেন এবং জনগণকে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দ বাজার জানায়, অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আরজি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।
চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে আরজি করে গত শুক্রবার থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার অন্যতম দাবি ছিল সন্দীপকে অধ্যক্ষ পদ থেকে সরানো। সোমবার সকালে তিনি পদত্যাগের কথা জানান।
চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় আরজি করের ভিতরের কারও হাত রয়েছে কি না, তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ ব্যাপারে পুলিশকে দেওয়া বিশেষ নির্দেশে মমতা বলেছেন, “দরকারে তার বন্ধুবান্ধকে ডেকে কথা বলুন। যিনি ফোন করে সে দিন খবর দিয়েছিলেন, তার সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।”
প্রসঙ্গত, মৃত ওই চিকিৎসকের বাবার দাবি, শুক্রবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হলে তার মেয়ের মৃত্যুর খবর দিয়েছিলেন পুলিশেরই কেউ।
তবে গ্রেফতার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। হিন্দুস্তান টাইমস সিপিআইএম কর্মী দীপ্সিতা ধর প্রশ্ন করেছেন, ‘প্রাথমিক ময়না তদন্তের রিপোর্টে পরিষ্কার যে, একাধিক অপরাধীর যোগসাজশ না থাকলে এই বর্বরতা অসম্ভব। শুধুমাত্র শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এই গ্রেপ্তারি নয় তো?’