বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর আমাজনের জঙ্গলে মিলল জীবিত ৪ শিশু

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তাদের মা ও ২ পাইলট নিহত হলেও এই শিশুরা বেঁচে গিয়ে জঙ্গলে ঘুরতে থাকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2023, 06:56 AM
Updated : 10 June 2023, 06:56 AM

বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ৪ আদিবাসী শিশুকে ৪০ দিন পর কলম্বিয়ার আমাজন জঙ্গল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।

সামরিক বাহিনীর সদস্য, দমকলকর্মী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা কাকেতা প্রদেশের জঙ্গল থেকে এই ৪ শিশুকে উদ্ধার করেছেন, ‍শুক্রবার পেত্রো এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এই শিশুরা যে সেসনা ২০৬ উড়োজাহাজের আরোহী ছিল, সেটি ১ মে ভোরের আগে বিধ্বস্ত হয়েছিল।

বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তাতে ৭ আরোহী ছিলেন; বিমানটি কলম্বিয়ার আমাজোনাস প্রদেশের আরারাকুয়ারা থেকে গুয়াভিয়ারে প্রদেশের সান হোসে দেল গুয়াভিয়ারে শহরে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় বিপদ সংকেত পাঠানোর পরপরই সেটি আমাজন জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়। এতে ওই শিশুদের মা ও পাইলটসহ তিনজন নিহত হন, এদের প্রত্যেকেই পূর্ণবয়স্ক।

“সেনাবাহিনীর দুঃসাধ্য অনুসন্ধান অভিযানে আমরা গুয়াভিয়ারে বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ৪ শিশুকে জীবিত পেয়েছি। এটা সারা দেশের জন্য আনন্দ সংবাদ,” টুইটারের মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় বলেছেন পেত্রো।

১ মে-র ওই দুর্ঘটনায় শিশুদের নিহত মা ও বিমানটির দুই পাইলটের মৃতদেহ বিমানটির ভেতরেই মেলে। কিন্তু বেঁচে যাওয়া ১৩, ৯ ও ৪ বছর এবং ১১ মাস বয়সী ৪টি শিশুকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই শিশুরা বিধ্বস্ত বিমানটি থেকে বেরিয়ে সাহায্যের আশায় জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়েছে, এমন ধারণা করেছিল উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় করা কলম্বিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

কারণে এই শিশুরা আমাজন অঞ্চলের যে আদিবাসী হুইতোতো সম্প্রদায়ের সদস্য, এরা প্রত্যন্ত জঙ্গলের সঙ্গে মানিয়ে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। তাদের শিকার, মাছ ধরা ও ফলমূল সংগ্রহ করার দক্ষতা ওই শিশুদের জীবিত থাকতে সাহায্য করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

এই শিশুদের খোঁজে জঙ্গলে অভিযান চালাতে কর্তৃপক্ষ কয়েকটি উদ্ধারকারী কুকুরসহ শতাধিক সেনা মোতায়েন করে। কিন্তু ৪০ মিটারের চেয়েও উঁচু দৈত্যাকার গাছ, বন্যপ্রাণী ও ভারি বৃষ্টির কারণে ‘অপারেশন হোপ’ নামের এ তল্লাশি ও অনুসন্ধান অভিযান কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই বৃষ্টিবনে জাগুয়ার, সাপ ও অন্যান্য শিকার প্রাণীর বাস।

কলম্বিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল জানায়, বনে গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি করা অস্থায়ী একটি আশ্রয় খুঁজে পান তারা। এখান থেকেই তারা ধারণা করেন, শিশুরা বেঁচে আছে। এর আগে নিখোঁজ শিশুদের ব্যবহার করা পানির বোতল ও তাদের খাওয়া ফলের ফেলে দেওয়া অংশ খুঁজে পেয়েছিলেন তারা।

কলম্বিয়ার সেনা ও বিমানবাহিনীর বিমান ও হেলিকপ্টারও এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিল।

মে-র মাঝামাঝিও এই চার শিশুকে জীবিত উদ্ধারের খবর দিয়ে টুইট করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পেত্রো। কিন্তু পরে সেই টুইট মুছে দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, কলম্বিয়ার শিশু কল্যাণ সংস্থা তার দপ্তরকে খবরটি দিলেও সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এবার ওই ৪ শিশুকে উদ্ধার এবং সেনাবাহিনীর অভিযানের কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর।