সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেইন নিয়ে একটি ‘শান্তি সম্মেলন’ শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ বন্ধে এসব শর্ত হাজির করেছেন।
Published : 15 Jun 2024, 08:24 PM
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, কিইভ যদি নেটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এবং মস্কোর দাবি করা চারটি প্রদেশের সব ভূখণ্ড হস্তান্তরে রাজি হয় তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করবে রাশিয়া।
যুদ্ধ বন্ধে শুক্রবার পুতিনের দেওয়া এই শর্ত দ্রুত প্রত্যাখ্যান করে কিইভ বলেছে, এইসব শর্ত মানা আত্মসমর্পণের শামিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেইন নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলন শুরুর আগে পুতিন যুদ্ধ বন্ধে এসব শর্ত হাজির করেছেন। এই সম্মেলনে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও এটিকে ‘শান্তি সম্মেলন’ নাম দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেইন বলছে, শান্তি তখনই আসবে যখন তাদের ভূখণ্ড থেকে রাশিয়া তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করবে এবং ১৯৯১ এর সোভিয়েত পরবর্তী সীমান্ত পুনর্বহাল করা হবে।
কিন্তু শান্তির জন্য পুতিন যেসব শর্ত দিয়েছেন তা ইউক্রেইনের ওইসব দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পুতিন যুদ্ধ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ শর্তই আরোপ করেছেন যা যুদ্ধে মস্কো ভালো অবস্থানের থাকায় ক্রেমলিনের ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইনের আক্রমণ শুরু করে। ওই সময় থেকেই পুতিন ইউক্রেইনকে অসামরিকীকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন, যা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াও বিষয়টিও শান্তি চুক্তির অংশ হতে হবে। ইউক্রেইনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করার দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
পুতিনের এসব দাবিকে ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেইন।
দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোইলাক রয়টার্সকে বলেন, “তিনি ইউক্রেইনকে পরাজয় স্বীকার করার প্রস্তাব দিচ্ছেন। তিনি আইনগতভাবে ইউক্রেইনের ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। তিনি ইউক্রেইনকে তার ভূরাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব লিখিতভাবে ত্যাগ করা প্রস্তাব দিচ্ছেন।”
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতালির স্কাইটিজি২৪ নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, “পুতিনের মন্তব্য একটি আল্টিমেটামের শামিল। এটা পরিষ্কার যে তিনি বুঝতে পেরেছেন শান্তি সম্মেলন হবে। পুতিন বুঝতে পেরেছেন বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইউক্রেইনের পক্ষে, জীবনের পক্ষে।”
ব্রাসেলসে নেটোর সদর দপ্তরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সাংবাদিকদের বলেন, 'শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেইনকে কী করতে হবে, তা নির্দেশ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই পুতিন।’
নিজের ঘোষণায় পুতিন বলেছেন, "শর্তগুলি খুব সহজ। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেইনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিজিয়ার পুরো অঞ্চল থেকে ইউক্রেইনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।”
২০২২ সালে রাশিয়া এই চারটি অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে। যদিও এই চারটি অঞ্চল এখনো তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
মস্কোর এই উদ্যোগ জাতিসংঘের বেশিরভাগ দেশের কাছে বেআইনি। এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রিমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া।
পুতিন বলেছেন, কিইভে যখন ঘোষণা দেবে এমন সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রস্তুত এবং অঞ্চলগুলো থেকে প্রকৃত অর্থে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নেটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে, আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ কার্যকর এবং আলোচনা শুরু হবে।
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তৃতীয় বছরে দেশটির প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে।