ধর্মগুরু থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ইব্রাহিম রাইসিই ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হবেন বলে ভাবা হচ্ছিল।
Published : 21 May 2024, 12:40 AM
ইরান ভেতরে-বাইরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে থাকার এই সময়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু দেশটির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। ধর্মগুরু থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ইব্রাহিম রাইসি ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
বর্তমানে ইরানের ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে রাইসির নামও শোনা গেছে। কিন্তু তার মৃত্যুতে এখন এ পদে ভবিষ্যতে কে আসবেন, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।
উত্তরসূরি হওয়ার মতো কোনও প্রার্থী আপাতত না থাকায় এ পদের দৌড়ে এখন অনেকেই সামনে আসতে পারেন এবং তাদের মধ্যে শুরু হয়ে যেতে পারে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
রাইসিকে যারা খামেনির জায়গায় দেখতে চেয়েছিলেন, সেই কট্টরপন্থিদের আশা গুড়ে বালি হয়েছে রাইসির মৃত্যুতে। তাদের শিবিরেই এখন খামেনির উত্তসূরি হওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা দেবে।
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাই ইরানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দুইজন সেই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।
১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচিত হন। তার আগে তিনিও ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকেই খামেনি দেশের শাসনক্ষমতার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছেন। চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তার নির্দেশই শেষ কথা। ইরানের নীতিমালার রূপকার তিনি, বর্হিবিশ্বের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের মূল নির্দেশকও তিনি।
আলি খামেনির মৃত্যু গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। গোটা বিশ্বে এর ব্যাপক প্রভাবও পড়তে পারে।
খামেনি কোনও উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেননি। তবে এ পদের জন্য যে দুটো নাম প্রায়ই উচ্চারিত হতে শোনা যায়, তার একটি ছিল রাইসি। আর অন্যটি খামেনির ছেলে মোজতবা; যিনি আড়াল থেকেই কলকাঠি নাড়েন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
রাইসিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে আসছিলেন খামেনি। তার সমর্থনেই ২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। কট্টরপন্থিদের একটি গ্রুপও তাকে সমর্থন দিচ্ছিল। রাইসি প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তার সর্বোচ্চ নেতার পদে আসীন হওয়ার পথ সুগম হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার এ পদে কে থাকবেন তা নির্ধারণ করে বিশেষজ্ঞ পরিষদ বা ৮৮ জন ধর্মীয় নেতার ‘অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’।
নতুন কোনও সর্বোচ্চ নেতার দরকার হলে বা কখনও যদি এই পরিষদ যদি মনে করে শীর্ষ নেতা তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারছেন না, তাহলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দিতে পারে এই বিশেষজ্ঞ পরিষদ।
পরিষদটির সদস্যদের নির্বাচনের মাধ্যমে বাছাই করা হয়। কিন্তু কারা সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবেন তা নির্ভর করে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল নামের একটি কমিটির অনুমোদনের ওপর। এই দুটি পরিষদের ওপরই সর্বোচ্চ নেতার প্রভাব থাকে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্ধারণী পরিষদ সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা জানান, অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’ ছয় মাস আগে খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরির তালিকা থেকে রাইসির নাম বাদ দিয়েছিল তার জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণে।
তারপরও রাইসিপন্থি প্রভাবশালী ধর্মগুরুরা সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরির তালিকায় তার নাম পুনর্বহালের জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।
তাছাড়া, খামেনি যেভাবে রাইসিকে টেনে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে তিনি তাকে উত্তরসূরি হিসাবে চেয়েছিলেন- তেমন লক্ষণই প্রকাশ পেয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
কিন্তু রাইসির মৃত্যু এক্ষেত্রে এক বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। তার মৃত্যু ইরানের শাসকগোষ্ঠীতে অভ্যন্তরীন কোন্দল সৃষ্টি করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।