সংখ্যালঘু মোর্চার বৈঠকের মধ্যদিয়ে বিজেপি ক্রমাগত ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার একটি অংশের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
Published : 29 Jul 2023, 06:07 PM
মুসলিমদের পাসমান্দা (আতরাফ) সম্প্রদায়ের মধ্যে দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টায় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর তারিক মনসুরকে অন্যতম সহসভাপতি করেছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি।
শনিবার বিজেপির অন্যতম নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তামিলনাডুর রামেশ্বররামে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন, এই একইদিনে মনসুরকে নিজেদের সহসভাপতির পদ দিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দলটি।
এনআরসি ও সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (এএমইউ), ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘মধ্য পথে’ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মনসুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলিম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে মোগল যুবরাজ দারাশিকোর শিক্ষাকে তুলে ধরার আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) প্রকল্পে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন তিনি। দারাশিকোর শিক্ষা তার ভাই মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাজের পথ থেকে ভিন্ন ছিল।
সংখ্যালঘু মোর্চার বৈঠকের মধ্যদিয়ে বিজেপি ক্রমাগত ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার একটি অংশের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দলটি পাসমান্দা মুসলিমদের দিকেই নজর দিয়েছে বেশি। এরা মূলত দলিত ও অন্যান্য আতরাফ শ্রেণি থেকে আসা মুসলিমদের একটি গোষ্ঠী।
মনসুর বিজেপির মনোনয়নে উত্তর প্রদেশ বিধানসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে এই পদে বিজেপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া চতুর্থ মুসলিম তিনি।
আরএসএস এর কার্যকরী পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দারাশিকো প্রকল্পে নিজের কাজের মাধ্যমে মনসুর সংঘের নেতৃবৃন্দের সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন। তিনি এএমইউয়ের পার্সিয়ান বিভাগকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে দারাশিকোর অধিকাংশ লেখার অনুবাদ করাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং এই মোগল যুবরাজকে মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি এ নিয়ে অনেক সম্মেলন ও সেমিনারও করেছিলেন মনসুর।
১৯৭০ এর দশকে জওহরলাল নেহরু মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর থেকেই আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শল্যচিকিৎসক মনসুর। ১৯৮২ সালে তিনি একই কলেজ থেকে শল্যচিকিৎসায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রধান জামাল সিদ্দিকী বলেছেন, মনসুর একজন ‘জাতীয়তাবাদী মুসলিম’, যিনি সবসময় ‘জাতিই প্রথম’ আদর্শকে সমর্থন করেছেন।
“দেশ ও দেশের ইতিহাসের জ্ঞানের মতোই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভাজনের লাইনগুলোর বিষয়েও তার বোঝাপড়া অত্যন্ত গভীর। তিনি এএমইউয়ের শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালনা করেছেন এবং তাদের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। তার (মনুসুর) এই নিয়োগ পার্টিকে (বিজেপি) আরও বিস্তৃত করতে সহায়তা করবে,” বলেছেন সিদ্দিকী।
পাসমান্দা মুসলিমদের দিকে বিজেপির নজরের পাশাপাশি আরএসএস বিশেষভাবে মুসলিম শিক্ষাবিদদের কাছে এবং চিকিৎসা, আইন, আমলা ইত্যাদি পেশার থাকা লোকজনের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
অপরদিকে ভারতের মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ও বিরোধীদলগুলো বলছে, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার বিজেপির চেষ্টার অংশ।