জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার বাদানুবাদ

ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য ২০০৬ সাল থেকেই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় আছে উত্তর কোরিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 12:45 PM
Updated : 21 March 2023, 12:45 PM

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার ডজন ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ক্রমবিকাশের জন্য দায়ী কে, তা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বাদানুবাদে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া।

পিয়ংইয়ং বৃহস্পতিবার তাদের সর্ববৃহৎ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৭ ছোড়ার দাবি করার চারদিন পর সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বৈঠকে বেইজিং ও মস্কো যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়াকে দোষারোপ করে তাদের যৌথ সামরিক মহড়াই উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির আধুনিকায়নে উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে।

অন্যদিকে ওয়াশিংটন বলেছে, আরও নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে রক্ষা করে চীন আর রাশিয়াই উত্তর কোরিয়ার আস্পর্ধা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য ২০০৬ সাল থেকেই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় আ ছে উত্তর কোরিয়া।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উত্তর কোরিয়া বিষয়ে কিছু করা থেকে বিরত রাখা নিরাপত্তা পরিষদের এই দ্বিধাবিভক্তি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন’ বলে বৈঠকে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত আনা এভস্তিগনিভা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ডকে ‘নজিরবিহীন’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। জাতিসংঘে চীনের উপ-রাষ্ট্রদূত গেং শুয়াং এই মহড়া কী ‘প্রতিরক্ষা মহড়া’ কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং কোরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের মহড়াকেই দায় দিয়েছেন।

“এই ধরনের মহড়া অনেকদিন ধরেই হচ্ছে, নিয়মিত হচ্ছে। এগুলো পুরোপুরি প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতির। ডিপিআরকের (উত্তর কোরিয়ার দাপ্তরিক নাম) প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের শত্রুতা পোষণ করে না,” বলেছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড।

গত বেশ কয়েকবছর ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। মস্কো ও বেইজিং চাইছে, উত্তর কোরিয়ার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে এক ধরনের ইতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যেন পিয়ংইয়ং আস্থা পায় এবং অস্ত্র কর্মসূচির তীব্রতা কমিয়ে আনে।

অন্যদিকে থমাস-গ্রিনফিল্ড বলছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে পিয়ংইয়ংকে ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছুই না করার জন্য’ পুরস্কৃত করা।

পিয়ংইয়ং তার নিজের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সোমবারের বৈঠকে রাশিয়া ও চীন ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা জোট অকাসের কারণে সৃষ্ট পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার বিষয়ক উদ্বেগের বিষয়টিও তুলেছিল। অকাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন পেতে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ওই উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, অকাস পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি লংঘন করছে না।

“উত্তর কোরিয়ার বেআইনি পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের লংঘন। এর সঙ্গে অকাসের কোনো ধরনের তুলনাই হতে পারে না,” বলেছেন জাতিসংঘে ব্রিটেনের উপ-রাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি।