সেনেটের নিয়ন্ত্রণ যে কারণে ডেমোক্র্যাটদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফলের কারণে দলের ভেতর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2022, 04:38 PM
Updated : 13 Nov 2022, 04:38 PM

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নেভাডায় জিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা নিশ্চিত করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।

দলটির জন্য সেনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কেনো গুরুত্বপূর্ণ তা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।

গত ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনু্ষ্ঠিত হয়। ভোটের আগে জনমত জরিপগুলোতে রিপাবলিকানদের ‘লাল ঢেউ’ ওঠার আভাস পাওয়া গেলেও বাস্তবে তেমনটা হয়নি।

বরং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক খারাপ করেছে দলটি।

সেনেটে আগে তাদের ৫০টি আসন ছিল। এবার এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৪৯টি আসন। যদিও এখনো জর্জিয়ার ‘রান অফ’ ভোট বাকি আছে। কিন্তু আগামী ৬ ডিসেম্বরের ভোটে সেনেটের ওই আসন যদি রিপাবলিকানদের পক্ষেও যায় তাতেও দলটির লাভ হচ্ছে না।

কারণ তখন উভয় দল আগের মত ৫০টি করে আসন দখল করবে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ‘টাই-ব্রেকিং ভোটের’ সুবিধা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরাই সেনেটে কর্তৃত্ব করবে।

তবে বাইডেন জর্জিয়ার আসনটিও চান। বলেছেন, যদি ডেমোক্র্যাটরা ৫১টি আসন পায় ‘সেটা এক কথায় আরো ভালো হবে’।

‘‘বাড়তি একটি আসন নিশ্চিতভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা আরো সহজ করে দেবে। তাছাড়া, এটা ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়ও সাহায্য করবে, যখন দলের হেরে যাওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি থাকবে।”

ভোটের চারদিন পর শনিবার রাতে নেভাডা আসনে সেনেট নির্বাচনের ফল প্রকাশ পায় এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ক্যাথরিন কর্টেজ মাস্তোর সেনেটর পদে পুনর্নির্বাচিত হন।

সেনেটের কর্তৃত্ব আবার ডেমোক্র্যাটদের হাতে যাওয়ার অর্থ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ক্ষমতার প্রথম দুই বছর সেনেট যেভাবে পরিচালিত হয়েছে আগামী দুই বছরও একই ঘটনা ঘটবে। কোনো বিষয়ে দুই দলের ভোট যখন সমান হবে তখন কমলা হ্যারিস ‘টাই-ব্রেকিং’ ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে উদ্ধার করবেন।

এছাড়াও সেনেটের নিয়ন্ত্রণ নিজ দলের হাতে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরো বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। যেমন, আগামী দুইবছর তিনি তার পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে ফেডারেল আদালতে বিচারপতির শূন্য পদ পূরণ করতে পারবেন। একইসঙ্গে তিনি তার প্রশাসনের কর্মীবাহিনীও নিজের পছন্দে বেছে নিতে পারবেন।

আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো, যদি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি অপ্রত্যাশিতভাবে অবসরে যান বা মারা যান তবে ওই শূন্য আসনে বাইডেনের মনোনীত ব্যক্তির নিয়োগ রিপাবলিকানরা আটকাতে পারবে না।

২০১৬ সালে সেনেটের ওই সময়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান পার্টি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মনোনীত বিচারপতি প্রার্থীর নিয়োগ আটকে দিয়েছিল।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও ধারণার চেয়ে ভালো করেছে ডেমোক্র্যাটরা। যদিও রিপাবলিকনরা সেখানে তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু লাল শিবির এখনো ‘ম্যাজিক নাম্বার’ ২১৮ নিশ্চিত করতে পারেনি।

ভোটের চারদিন পরও এখনো যেসব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে ভোট গণনা চলছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ক্যালিফোর্নিয়ায় হওয়ায় নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ব্যাপারেও আশা ছাড়ছে না ডেমোক্র্যাটরা।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদের ২১১টি আসন রিপাবলিকানদের বাক্সে আর ২০৪টি ডেমোক্র্যাটদের দখলে গেছে বলে জানাচ্ছে সিএনএন। আরও ২০টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি।

সদ্য সমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। এ ক্ষতি কতটা স্থায়ী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে চান।

অন্যদিকে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ক্রমে অজনপ্রিয় হয়ে পড়া বাইডেনের ‍অবস্থান দলের ভেতরে শক্তিশালী হয়েছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।