সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া এলাকায় রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Published : 30 Nov 2024, 09:55 PM
সিরিয়ার সেনাবাহিনী শনিবার জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোতে ঢুকে পড়া বিদ্রোহীদের এক বড় ধরনের হামলায় তাদের বহু সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম এই আশ্চর্য আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে। ২০২০ সাল থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অনেকটা স্থবির হয়ে ছিল, কিন্তু আল-শামের এই হামলায় পরিস্থিতি বড় ধরনের একটা ঝাঁকুনি খেয়েছে। এতে কয়েক অংশে বিভক্ত সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে তুরস্ক সীমান্তের কাছে যুদ্ধ আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া এলাকায় রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিদ্রোহীদের অগ্রগতি স্বীকার করে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কমান্ড জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর বিশাল অংশে প্রবেশ করেছে। আট বছর আগে রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের হটিয়ে দেওয়ার পর থেকে নগরীর ওই অংশগুলো পুরোপুরি রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীনে ছিল।
সামাজিক মাধ্যমে আলেপ্পো থেকে আসা ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের একটি দল রাতে নগরীটিতে প্রবেশ করার পর সেখানকার সাদাল্লাহ আল-জাবিরি স্কয়ারে জড়ো হয়েছেন, তাদের পেছনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিশাল একটি বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে।
টেলিভিশন ফুটেজে আলি জুম্বা নামের এক বিদ্রোহী যোদ্ধা বলেন, “আমি আলেপ্পোর সন্তান। আট বছর আগে ২০১৬ সালে আমি এখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম। খোদাকে ধন্যবাদ আমরা মাত্রই ফিরে এসেছি। এটি বর্ণনাতীত এক অনুভূতি।”
সিরিয়ার সামরিক কমান্ড জানায়, প্রচুর সংখ্যক বিদ্রোহী বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালায়। এ হামলা সামাল দিতে সিরীয় বাহিনীকে পিছু হটতে হয়। তবে তারা পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
সিরীয় সেনাবাহিনী বলেছে, বোমাবর্ষণের কারণে বিদ্রোহীরা স্থায়ী কোনো অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তারা ‘বিদ্রোহীদের হটিয়ে পুরো শহর ও আশপাশের গ্রামগুলোর ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ প্রত্যয় জানিয়েছে।
বিদ্রোহীদের দু’টি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, বিদ্রোহীরা ইদলিব প্রদেশের মাররাত আল নুমান শহরের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো প্রদেশটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। আলেপ্পোর পাশাপাশি এটিও প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি ধাক্কা।
এসব লড়াইয়ে ঝিমিয়ে পড়া সিরিয়ার সংঘাত আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। গাজা ও লেবাননের যুদ্ধের কারণে এই পুরো অঞ্চলটি বিপর্যস্ত হয়ে আছে। লেবাননে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি বুধবার থেকে শুরু হয়েছে।
সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাগুলো আসাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরেই রয়ে গিয়েছিল। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এইসব এলাকা থেকেই সর্বশেষ হামলা শুরু করা হয়েছে।
সিরিয়ার দু’টি সামরিক সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, শনিবার আলেপ্পোর শহরতলীতে রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, মস্কো বিদ্রোহীদের ওই হামলাকে সিরিয়ার সাবভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে।
তিনি বলেছেন, “যত দ্রুত সম্ভব ওই এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা পুনরুদ্ধার করতে আমরা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের পক্ষে আছি।”
আরও পড়ুন:
বিদ্রোহীদের কব্জায় আলেপ্পোর অর্ধেকের বেশি এলাকা, তুমুল লড়াই