ধর্মঘটী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নের সভাকক্ষে মমতা দুই ঘণ্টারও বেশি বসে ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়নি।
Published : 12 Sep 2024, 11:39 PM
কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে যাওয়া জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বসতে ব্যর্থ হওয়ার পর এক আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যের শীর্ষ পদের প্রতি তার কোনো মোহ নেই আর ‘জনগণের স্বার্থে’ পদত্যাগ করতে তিনি রাজি আছেন তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। ধর্মঘটী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নের সভাকক্ষে মমতা দুই ঘণ্টারও বেশি বসে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়নি।
শুরু থেকেই মমতার সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্মঘটী চিকিৎসকদের দু’টি প্রধান শর্ত ছিল। এর একটি হল, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার। দ্বিতীয় শর্তে ৩০ জন প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠকে যোগ দিতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু দুই শর্তেই আপত্তি জানায় রাজ্য সরকার।
চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা বৈঠকের জন্য নবান্নের গেইট পর্যন্ত এসেছিলেন। কিন্তু যখন জানলেন সরকার তাদের বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের দাবি মেনে নেয়নি তখন তারা তারা ভেতরে প্রবেশ করতে আর রাজি হননি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানায়।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্মঘটী চিকিৎসকদের অন্যান্য শর্ত মেনে নিয়েছিল সরকার। তাদের ১৫ জন প্রতিনিধিকে বৈঠকের জন্য আসার অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা নিজেদের দাবি মতো আসেন ৩২ জন; পরে সম্ভবত আরেকজনে এসে যোগ দেন। তাদের সবাইকেই ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ শুধু সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দিতে রাজি হয়নি; বলেছে, বৈঠকের কার্যধারা রেকর্ড করা হবে আর পরে তা সম্প্রচার করা যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা এভাবে বৈঠক করতে রাজি হননি। এরপর দুই ঘণ্টারও বেশি নবান্নের সভাকক্ষে অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
এরপর নবান্ন থেকেই সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, ধর্মঘটী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সংলাপের জন্য সরকার সবসময়ই প্রস্তুত আছে।
কিছু ‘স্বার্থান্বেষী প্রতিবাদকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির’ জন্য ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের আগেও পর পর দুই দিন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু সাড়া পাননি।
তিনি বলেন, “বাংলার মানুষের অনুভূতির কাছে ক্ষমা চাই আমি। আপনারা ভেবেছিলেন আজ বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে। যারা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাদের আমি ক্ষমা করলাম।
সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে পড়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমাকে অসম্মান করা হয়েছে। আমাদের সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ জানে না এখানে একটি রাজনৈতিক রঙ আছে।”
এই রাজনৈতিক রঙের পেছনে যারা আছে তারা, তিনি বলেন, “বিচার চায় না। তারা চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।
“জনগণের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। আমি তিলোত্তমার (খুন হওয়া নারী চিকিৎসক) বিচার চাই। আমি চাই মানুষ চিকিৎসা পাক।”
ধর্মঘটী চিকিৎসকরা শুধু নির্দেশনা পালন করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি জানি প্রতিনিধিদের অনেকেই বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু দুই থেকে তিনজন লোক বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছে। পেছন থেকে তারা বলছে, বৈঠকে যেও না, আলোচনা করো না।”
তিনি বলেন, তার একমাত্র অনুরোধ হচ্ছে চিকিৎসকরা ধর্মঘট ছেড়ে কাজে যোগ দিক, কারণ লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মমতা বলেছেন, এরপরও যদি ধর্মঘটী চিকিৎসকরা বৈঠক করতে চান তবে মুখ্যসচিব ও সরকারের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা যেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাদের বক্তব্য শোনেন। কিন্তু তিনি আপাতত আর কোনো বৈঠকে থাকছেন না।
আরজি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা ধর্মঘট পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের ধর্মঘটে ইতোমধ্যে ৩৩ দিন পার হয়ে গেছে।