চীনের চিপ তৈরির সক্ষমতাকে খাটো করে দেখার ‘সুযোগ নেই’

এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও গত সপ্তাহেই বলেছেন, চীন যে পরিমাণ সম্পদ চিপের পেছনে ঢালছে তা মোটেও কম নয়, এবং একে ছোট চোখে দেখার সুযোগ নেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2023, 04:01 PM
Updated : 6 June 2023, 04:01 PM

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজ দেশেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চিপ তৈরির সক্ষমতা রয়েছে চীনের, শিল্পসংশ্লিষ্টরা দিয়েছেন এমন বিশ্লেষণ।

“চলমান সংকট মোকাবেলায় চীনের সংকল্প এবং সক্ষমতাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কিছু সেকেলে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেমিকন্ডাক্টর পণ্য বানাতে সক্ষম।”  সিএনবিসিকে বলেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিউচারাম গ্রুপের মুখ্য বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নিউম্যান।

সর্বাধুনিক এআই তৈরির জন্য হুয়াওয়ে ও আলিবাবার মতো চীনা কোম্পানিগুলো আগের তুলনায় কমসংখ্যক সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার বা একটা মাত্র হার্ডওয়্যারে নির্ভরশীলতার পরিবর্তে একাধিক চিপ জুড়ে দিয়ে কাজ চালানোর পথ খুঁজে দেখছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা চীনের কোম্পানিগুলোর জন্য একটা “সংকট” হলেও পরীক্ষাগুলোতে “আশানুরূপ” ফল পাওয়া গেছে।

“কিছুই অসম্ভব নয়” বলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সেইসঙ্গে শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক পল শারে।

তিনি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত দীর্ঘ মেয়াদে চীন এসব প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবে, সম্ভবত এতটা দুর্বার গতিতে যা অন্যরা ধারণাও করতে পারবে না।”

চীনের অগ্রগতি ঠেকাতে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের কোম্পানিগুলোর ওপর চীনে চিপ রপ্তানিতে প্রযুক্তিগত সীমবদ্ধতা আরোপ করে। তার জবাবে গত মাসে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতি দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিপ নির্মাতা মাইক্রন থেকে চিপ কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার পরপরই দক্ষিণ কোরিয়া যেন চীনে মাইক্রনের জায়গা দখল করতে না পারে সেজন্য দেশটিকে হুঁশিয়ার করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেনসেন হুয়াং গত সপ্তাহেই বলেছেন, চীন যে পরিমাণ সম্পদ চিপের পেছনে ঢালছে তা “মোটেও কম নয়, এবং তাদেরকে ছোট চোখে দেখার সুযোগ নেই”।

চীনের কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে চিপের পেছনে ঢেলছে এক হাজার চারশ কোটি ডলার। তারা দেশটির সরকারের নানা প্রণোদনা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রকল্পের সহায়তাও পাচ্ছে বলে লিখেছে সংবাদসংস্থা রয়টর্স।

চীনে অনেক “জিপিইউ’র (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) স্টার্ট আপ শুরু হয়েছে” এবং বাজারে বিদ্যমান কোম্পানিগুলো “প্রবল বেগে এগিয়ে না গেলে” প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে না। গত সপ্তাহে কম্পিউটেক্স তাইপেই ২০২৩ প্রদর্শনীতে এ এমন মন্তব্য করেন এনভিডিয়ার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

বিকল্প উপায়

লিগাসি চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে আধিপত্য বিস্তারের পথে চীন এগিয়েও যাচ্ছে এমনটাই বিশ্বাস বিশ্লেষকদের।

ম্যাচিওর্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চিপ তৈরিতে চীন বেশ সাফল্য দেখিয়েছে” –বলেছেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নিডহাম অ্যান্ড কোম্পানির মুখ্য ও জ্যেষ্ঠ সেমিকন্ডাক্টর বিশ্লেষক চার্লস শি।

২৮-ন্যানোমিটার বা তার চেয়ে আকারে বড় ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরি চিপগুলোকে বলা হয় লিগাসি চিপ, অপেক্ষাকৃত পুরোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো বানানো হয়।  এই চিপগুলো গাড়ি, দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ও অন্যান্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান টোটাল টেলিকম বলেছে চীন ২০২১ সালেই ২৮-ন্যানোমিটার ও ১৪-ন্যানোমিটার চিপ তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।

পরামর্শক কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ইনকর্পোরেশন বলছে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ২৮-ন্যানোমিটার চিপের চাহিদা তিনগুণ বেড়ে  দুই হাজার আটশো কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

“আমি নিশ্চিত যে, শীর্ষ চীনা নির্মাতা কোম্পানিগুলো লিগাসি ঘরানার চিপ তৈরিতে টিকে থাকবে, এই পুরনো মডেলের চিপগুলোর জন্য খুবই সুস্থ একটি বাজার রয়েছে।” - সিএনবিসিকে এমনটাই বলেছেন শারে।

তিনি আরও যোগ করেন, “চীনকে হয় ব্যাপকহারে লিগাসি চিপ বানিয়ে প্রচুর অর্থ যোগার করতে হবে, না হয় প্রচুর অর্থ এবং মানব ও অন্যান্য সম্পদ ব্যয় করে সর্বাধুনিক চিপ তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়টির সম্ভবনা অন্তত অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না।”