স্টারশিপ ভ্রমণ করবে কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণের সহায়তায়: ইলন মাস্ক

ঘূর্ণমান মহাকাশযানের জড়তা শক্তি ব্যবহার করে আর্টিফিসিয়াল গ্র্যাভিটি বা কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ ধারণাটি প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এবং দশকের পর দশক ধরে এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর জগতেও অটল।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2024, 09:58 AM
Updated : 10 March 2024, 09:58 AM

তৃতীয় উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সবচেয়ে বড় রকেট স্টারশিপ।

সম্প্রতি নতুন তথ্যে ইঙ্গিত মিলেছে, ‘নিয়ন্ত্রকরা অনুমতি দিলে’ ১৪ মার্চই রকেটটি উৎক্ষেপণ করবে স্পেসএক্স।

এর মধ্যেই কোম্পানির সিইও ইলন মাস্ক সূদূরপ্রসারী এক ধারণার কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে রকেটটিতে চড়ে মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণ কেমন হবে, তার সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

“মঙ্গল গ্রহে যাত্রার সময় স্টারশিপে একটি ছোট ঘুর্ণন ব্যবস্থা থাকবে,” এক্স-এ ভিডিও গেইম কোম্পানি ‘আইডি সফটওয়্যার’-এর প্রতিষ্ঠাতা জন কারম্যাকের দেওয়া পোস্টের জবাবে বলেন মাস্ক, যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে রকেটের ‘ড্রাগন’ শাটলে ঘুর্ণায়মান মাধ্যাকর্ষণ ব্যবস্থা পরীক্ষার চেষ্টা করবে কোম্পানিটি।

“কোনো কিছু না থাকার চেয়ে একটি ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণ ভেক্টর থাকাও ভাল।”

ঘূর্ণমান মহাকাশযানে জড়ো হওয়া শক্তি ব্যবহার করে ‘আর্টিফিসিয়াল গ্র্যাভিটি’ বা কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণের এ ধারণাটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে। আর বেশ কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে এর উপস্থিতি মিলেছে।

সিনেমার জগতে এর প্রাথমিক ঝলক মিলেছিল ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘২০০১: এ স্পেস অডিসি’ সিনেমায়, যার পরিচালক ছিলেন কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা স্ট্যানলি কুবরিক।

সিনেমাটির গল্পে দেখা যায়, ‘ডিসকভারি ওয়ান’ নভোযানের নভোচারীরা ‘সেন্টারফিউজ’ নামের এক ঘুর্ণায়মান ব্যবস্থার ভেতর হাঁটাহাঁটি করছেন।

মহাকাশে নভোযান ঘোরানোর ক্ষেত্রে নানা ঝামেলায় পড়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান বলছে, মাইক্রোগ্র্যাভিটি’তে দীর্ঘ সময় কাটালে তা মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এর মধ্যে রয়েছে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া ও ‘স্পেসফ্লাইট অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো-অকুলার সিনড্রোম’ নামের একটি রোগও, যেখানে মানুষের চোখের আকৃতি পরিবর্তনের কারণে তার দৃষ্টিশক্তির ওপর প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকে।

তবে, এ জাতীয় মধ্যাকর্ষণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এর একটি হল– পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় শক্তি তৈরির ক্ষেত্রে মহাকাশযানকে আকারে বেশ বড় হতে হবে। অর্থাৎ মহাকাশযানটির কৌণিক বেগের ব্যাসার্ধ যত কম হবে, মহাকর্ষ বল তৈরি করতে হলে তত দ্রুত একে ঘুরতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ঘূর্ণনের কারণে নভোচারীদের ‘মোশন-সিকনেস’ হওয়ার ঝুঁকিও আছে। এ ছাড়া, নভোচারীর পা ও মাথার অংশে মহাকর্ষের প্রভাব ভিন্ন হলে নেতিবাচক পরিণতি ঘটার ঝুঁকিও রয়েছে।

মাস্কের দেওয়া পোস্টের জবাবে জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা পিটার হেগ বলেন, স্টারশিপে একক ঘূর্ণনের বদলে এর বিকল্প ব্যবস্থাও ব্যবহার করা যেতে পারে।

“কেন স্টারশিপগুলোকে জোড়ায় জোড়ায় ও এদের একসঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হবে না? “এর ফলে মহাকাশযানটি একটি দীর্ঘ ব্যাসার্ধ পেতে পারে ও সহজেই মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণকে সেভাবে অনুসরন করতে পারে।”

“এর বদলে একজোড়া স্টারশিপ পাঠিয়ে তাদেরকে সমন্বিত করা যেতে পারে না?” লেখেন তিনি।

“এতে করে নভোযানের ব্যাসার্ধও বেড়ে যাবে ও মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ সিম্যুলেট করার উপায়ও সহজ হবে।”

এর জবাবে মাস্ক সরাসরি হেগকে কিছু না বললেও তিনি ২০২১ সালে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, স্পেসএক্স এরইমধ্যে এ সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখেছে।

এদিকে, মাস্কের বিভ্রান্তিকর ও অর্থহীন ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার প্রবণতার জন্য তার মন্তব্যগুলো স্বাভাবিকভাবে নেওয়া জটিল বিষয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ‘ফিউচারিজম’।