টেইলর সুইফটের ডিপফেইক: নতুন আইনের দাবি মার্কিন কংগ্রেসে

অনলাইনে পোস্ট করা পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের সিংহভাগই ডিপফেইকের মাধ্যমে তৈরি, যেখানে এ ধরনের কনটেন্টের শিকার ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশই নারী।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2024, 10:23 AM
Updated : 28 Jan 2024, 10:23 AM

অনলাইন জগতে ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন পপ গায়িকা টেইলর সুইফটের বিভিন্ন ‘আপত্তিকর ডিপফেইক’ ছবি, যাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন আইন তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন জনপ্রতিনিধিরা।

এ ধরনের ‘ডিপফেইক’ ছড়িয়ে পড়াকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য জো মোরেলে।

সামাজিক মাধ্যম এক্স এক বিবৃতিতে লিখেছে, তারা এমন ছবিগুলো ‘সক্রিয়ভাবে মুছে ফেলার’ ও এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধেও ‘ব্যবস্থা’ নিচ্ছে।

“আমরা এ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যাতে এমন অপরাধমূলক ঘটনা অবিলম্বেই সমাধান করে কনটেন্টগুলো সরিয়ে ফেলা যায়।”

এমন বেশ কয়েকটি ছবি অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলেছে এক্স। তবে, সমস্যা হচ্ছে সুইফটের একটি ছবি মোছার আগে সেটির ভিউ সংখ্যা ছিল চার কোটি ৭০ লাখ।

এআই প্রযুক্তির সহায়তায় কারও মুখ বা শরীরের অঙ্গ হেরফের করার মাধ্যমে ডিপফেইক তৈরি হয়ে থাকে।

২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে এআইয়ের উত্থানের পর থেকে এমন ‘ডক্টরেটেড (ফটোশপড বা ডিজিটাল উপায়ে পরিবর্তন করা)’ ছবি তৈরির প্রবণতা বেড়েছে সাড়ে পাঁচশ শতাংশ।

বর্তমানে ডিপফেইক ছবি শেয়ারিং বন্ধ করা বা এগুলো ঠেকানোর মতো কোনো আইন নেই যুক্তরাষ্ট্রে। তবে, এবার সমস্যাটি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

এদিকে, ২০২৩ সালের ‘অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট’-এর অংশ হিসেবে ডিপফেইক পর্নোগ্রাফি শেয়ার করাকে অবৈধ বা বেআইনি ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য।

গত বছর ‘প্রিভেনটিং ডিপফেইকস অফ ইনটিমেট ইমেইজ অ্যাক্ট’ নামে এক নতুন আইন প্রস্তাব করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতিনিধি জো মোরেলে, যেখানে কারও সম্মতি ছাড়া ডিপফেইক পর্নোগ্রাফি শেয়ার করাকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

মোরেলে আরও বলেন, এ ধরনের ছবি বা ভিডিও কারও ‘অপরিবর্তনীয় মানসিক, আর্থিক ও মানহানীর’ কারণ হতে পারে। আর দুর্ভাগ্যবশত নারীদের ওপরই এর প্রভাব বেশি পড়ে থাকে।

অনলাইনে পোস্ট করা পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের সিংহভাগই ডিপফেইকের মাধ্যমে তৈরি, যেখানে এ ধরনের কনটেন্টের শিকার ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশই নারী। — গত বছর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে ‘স্টেট অফ ডিপফেইকস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে।

“টেইলর সুইফটের সঙ্গে যা ঘটেছে তা নতুন কিছু নয়।” — এক্স-এ দেওয়া পোস্টে লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতিনিধি ইভেট ডি ক্লার্ক।

তিনি আরও বলেন, নারীদেরকে ‘বহু বছর ধরে’ প্রযুক্তির মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। আর “এআই প্রযুক্তির বিকাশে ডিপফেইক বানানো আগের চেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।”

ক্লার্কের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রিপাবলিকান দলের কংগ্রেস সদস্য টম কিন জুনিয়র বলেছেন, এটা “স্পষ্ট যে, এআই প্রযুক্তি দরকারের চেয়েও দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।”

“ভুক্তভোগী টেইলর সুইফট বা দেশের যেকোনো তরুণই হোক না কেন, এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা বানাতে হবে।”

এদিকে, নিজের ডিপফেইক ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি সুইফট। তবে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘ডেইলি মেইল’ বলছে, এআইয়ের মাধ্যমে ছবি বানানো সাইটগুলোর বিরুদ্ধে ‘আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে” সুইফটের দল।

অন্যদিকে, এ বছর গোটা বিশ্বে নির্বাচনে কোটি কোটি মানুষ ভোট দেবেন, যার ফলে এআইয়ের মাধ্যমে ভুয়া কনটেন্ট তৈরির বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছে।

এ সপ্তাহে নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করা এক ভুয়া রোবোকল নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটিও এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি।