৩০ মিনিট আগেই সৌরঝড়ের সতর্কতা দেবে নাসার নতুন এআই

এই সতর্কবার্তার ফলে বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পাওয়ার গ্রিড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে ঝড়ের মারাত্মক প্রভাব থেকে বাঁচাতে দরকারি সময় পাবে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 10:17 AM
Updated : 15 May 2023, 10:17 AM

মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল বানিয়েছে, যা পৃথিবীতে আসন্ন কোনো সৌরঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত হানার জায়গা সম্পর্কে অগ্রিম ভবিষ্যদ্বাণী দেবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই ব্যবস্থা সম্ভাব্য সৌরঝড় সম্পর্কে ‘৩০ মিনিটের আগাম সতর্কবার্তা’ দিতে পারে।

মার্কিন এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ‘গদার স্পেস সেন্টারের’ গবেষকরা বলেন, মহাকাশের বিপজ্জনক আবহাওয়া সম্পর্কে সতর্কতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এআই মডেলটি নাসার বিভিন্ন স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে থাকে।

এই সতর্কবার্তার ফলে বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পাওয়ার গ্রিড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে ঝড়ের মারাত্মক প্রভাব থেকে বাঁচাতে দরকারি সময় পাবে বলে উঠে এসেছে মার্কিন জার্নাল ‘স্পেস ওয়েদার’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

সূর্য থেকে ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ নামে পরিচিত বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত প্লাজমা বিস্ফোরণে সৌরঝড়ের উৎপত্তি হয়।

এইসব চার্জযুক্ত কণা তথাকথিত ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় তৈরি করে, যা পৃথিবীকে ঘিরে থাকা প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বকক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করায় ভূপৃষ্ঠে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ব্ল্যাকআউট ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণ হতে পারে।

এইসব ঝড়ের মাত্রা ‘মৃদু থেকে চরম’ পরিস্থিতি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আর প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে এগুলোর প্রভাব ক্রমাগতই বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ১৯৮৯ সালে কানাডার কুইবেক শহর ১২ ঘণ্টার জন্য ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে। ফলে, শহরের লাখ লাখ বাসিন্দা অন্ধকারে থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।

১৮৫৯ সালে ‘ক্যারিংটন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত আরেক আলোচিত সৌরঝড়ের ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন টেলিগ্রাফ স্টেশনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, সে সময়ের ব্যবহারকারীদের বার্তা পাঠানোর সুবিধা বাধার মুখে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন, বিশ্ববাসী সূর্যের ১১ বছরের কার্যক্রম চক্রের শীর্ষ পর্যায় অর্থাৎ ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’ পর্যায়ের কাছাকাছি যাওয়ার মধ্যেই এমন বিধ্বংসী সৌরঝড়ের ঝুঁকি বাড়ছে।

এমন ধ্বংসযজ্ঞ রোধে আগের বিভিন্ন সূর্য সংশ্লিষ্ট অভিযান থেকে সৌর বায়ু পরিমাপ করার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন গ্রাউন্ড স্টেশনে পর্যবেক্ষণ করা ভূ-চৌম্বকীয় ব্যাঘাতে সম্ভাব্য সংযোগ শনাক্তে নতুন এআই মডেল তৈরি করেছেন নাসা বিজ্ঞানীরা।

নাসার তৈরি করা এই কম্পিউটার মডেলের নাম ‘ড্যাগার’। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভূচৌম্বকীয় ব্যাঘাত ঘটার ‘৩০ মিনিট আগে’ সেগুলোর দ্রুত ও সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারে এটি।

২০১১ সালের অগাস্ট এবং ২০২৫ সালের মার্চে ঘটিত দুটি ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের বিপরীতে এই মডেল পরীক্ষা করেছে নাসা। সে সময় এটি ঝড়ের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে ‘দ্রুত ও নির্ভুল’ পূর্বাভাস দিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

নতুন এই ব্যবস্থা সর্বপ্রথম এআই’র দ্রুত বিশ্লেষণকে বাস্তবিক পরিমাপের সঙ্গে সমন্বিত করে মহাকাশ ও পৃথিবীতে ঘন ঘন আপডেট হওয়া বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রদত্ত প্রাথমিক সতর্কতা আসন্ন কোনো সৌরঝড় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অবকাঠামোকে সুরক্ষা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সংবেদনশীল ব্যবস্থাকে অস্থায়ীভাবে অফলাইনে নেওয়া বা স্যাটেলাইটকে বিভিন্ন কক্ষপথে স্থানান্তরের মতো বিষয়গুলো।

Also Read: বিশাল সৌর ঝড়ে পূর্বাভাস দেবে নাসার ‘ড্যাগার’