চীনের স্মার্টফোন বাজারে দশকের সবচেয়ে বড় ধস

নভেম্বরে ই-কমার্স সাইট আলিবাবা’র বার্ষিক ‘শপিং বোনাঞ্জায়’ চীনের ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এই প্রথম আয়োজকরা এর চূড়ান্ত বিক্রি সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2023, 12:35 PM
Updated : 30 Jan 2023, 12:35 PM

এক দশক রাজত্বের পর কোভিড মহামারীর কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ চীনের বাজারে।

বিশ্লেষক কোম্পানি কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ অর্থবছরে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে ১৪ শতাংশ। এর ফলে, গত ১০ বছরে সবচেয়ে কম স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে দেশটিতে।

আরেক বিশ্লেষক কোম্পানি ক্যানালিস বলছে, গত ১০ বছরে চীনের স্মার্টফোন বিক্রি ৩০ কোটি ইউনিটের নীচে নেমে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। এমনকি ডিসেম্বরে ঐতিহাসিকভাবে মৌসুমগত বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেলেও, এবারের প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে পাঁচ শতাংশ।

গত তিন বছরে চীনের ‘জিরো কোভিড’ নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটির ব্যবসায়িক খাতে ব্যাঘাত ঘটেছে। ফলে, ভোক্তাদের আস্থাও কমে গেছে। এতে চীনের দুই অংকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও সমাপ্তি ঘটেছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

ডিসেম্বরের শুরুতে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধে আকস্মিকভাবে শিথিল করার পর আক্রান্তের সংখ্যা সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে, দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়তে থাকে।

গত বছর চীনের জিডিপি বেড়েছে তিন শতাংশ, যা দশকের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

নভেম্বরে ই-কমার্স সাইট আলিবাবা’র বার্ষিক ‘শপিং বোনাঞ্জায়’ চীনের ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আয়োজনটি তুলনা করা হয় ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’র সঙ্গে। আর এটি দেশটিতে ভোক্তাক্ষুধা মেটানোর সম্মুখসারীর জায়গা হিসেবে বিবেচিত। ২০০৯ সালে চালুর পর এই প্রথম আয়োজকরা এর চূড়ান্ত বিক্রি সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

এই ঘোলাটে সময়েও এক প্রযুক্তি জায়ান্ট রাজত্ব করেছে দেশটিতে। ক্যানালিসের তথ্য অনুসারে, নিজেদের ‘আগ্রাসী প্রচারণা’ ও ‘ব্যাপক’ চাহিদার কারণে চীনে রেকর্ড ১৮ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে অ্যাপলের। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন উচ্চমাত্রার চিপসেট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের পতনের ঘটনাও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

চীনের সঙ্গে অ্যাপলের সম্পর্ক এখনও স্পর্শকাতর। দেশটি কেবল আইফোনের অন্যতম বৃহৎ বাজারই নয়, বরং এখানে আইফোন উৎপাদনের কারণেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির অবস্থানে পৌঁছেছে অ্যাপল।

গত কয়েক বছরে ফক্সকনের কারখানা কর্মীদের ‘বিরল’ আন্দোলন ও কোভিড সম্পর্কিত বিভিন্ন বাধার কারণে দেশটিতে আইফোন উৎপাদনের গতি কমে গিয়েছে। ফলে, এটি অ্যাপলকে নিজেদের সরবরাহ চেইন সংশ্লিষ্ট কৌশল বদলাতে বাধ্য করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।

ডিসেম্বরের শুরুতে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিজেদের কিছু সংখ্যক সরবরাহ চেইন চীন থেকে বদলে ভিয়েতনাম ও ভারত’সহ এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছে অ্যাপল।

বিশেষ করে ভারত, অ্যাপলের সরবরাহ চেইনে তুলনামূলক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি জে.পি মরগ্যানের বিশ্লেষকদের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিক আইফোনের ২৫ শতাংশ এই দেশে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে অ্যাপল।

চতুর্থ প্রান্তিকে, চীনে শিপমেন্ট পাঠানো শীর্ষ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো হলো অ্যাপল, ভিভো, ওপ্পো, অনার (মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর হুয়াওয়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে) ও শাওমি।