এনএসও’র পর কোয়াড্রিম: স্পাইওয়্যারে হ্যাকিং অন্তত ১০ দেশে

কোয়াড্রিম কোম্পানিটির কোনো ওয়েবসাইট নেই, আর কর্মীদেরও তাদের নিয়োগকর্তার কোনো সূত্র সামাজিক মাধ্যমে রাখায় নিষেধাজ্ঞা আছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2023, 11:13 AM
Updated : 12 April 2023, 11:13 AM

অন্তত ১০টি দেশে সংবাদ কর্মী, বিরোধী দলীয় নেতা এবং অধিকার সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে ইসরায়েলের এক কোম্পানির হ্যাকিং টুল। শিকারদের মধ্যে আছেন উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ব্যক্তিরাও।

এই বিষয়ে নতুন গবেষণাপত্র মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিটিজেন ল্যাব’।

নিজস্ব প্রতিবেদনে সিটিজেন ল্যাব বলেছে, তারা ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার কোম্পানি এনএসও গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ‘কোয়াড্রিম লিমিটেড’-এর তৈরি নজরদারি সফটওয়্যারে আইফোন হ্যাকড হওয়া বেশ কয়েকজন সুশীল সমাজের ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করতে পেরেছে। আর অপব্যবহারের অভিযোগে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রেও কালো তালিকাভুক্ত।

একই সময়ে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে মাইক্রোসফট বলেছে, তারা ‘উচ্চ আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে দাবি করছে, কোয়াড্রিমের সঙ্গে এই স্পাইওয়্যারের ‘শক্ত যোগসূত্র’ আছে।

এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফটের ‘অ্যাসোসিয়েট জেনারেল কাউন্সেল’ এমি হোগান-বার্নি বলেন, কোয়াড্রিমের মতো বিভিন্ন ভাড়াটে হ্যাকিং দল ‘অন্ধকারে রাজত্ব করে’ ও এদের প্রকাশ্যে আনা ‘এমন কার্যক্রম বন্ধের জন্য অপরিহার্য’।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স কোয়াটড্রিমের নিবন্ধনপত্রের ইমেইল তালিকায় থাকা ইসরায়েলি আইনজীবী ভিবেকে ড্যাঙ্কের মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে কোম্পানির দপ্তরের বাইরে পরিদর্শন’সহ গত বছর কোয়াড্রিমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের প্রচেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি রয়টার্স। 

২০২২ সালে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসে, এর আগে কোয়াড্রিম এমন এক ‘যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তামুক্ত’ হ্যাকিং টুল বানিয়েছে, যার মিল রয়েছে এনএসও’র স্থাপন করা প্রযুক্তির সঙ্গে।

এই ধরনের হ্যাকিং টুল ‘জিরো-ক্লিক’ নামে পরিচিত। এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন সাইবার অপরাধী, গুপ্তচর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আর ডিভাইসের মালিককে কোনো ক্ষতিকারক লিংক খোলার বা ‘বিপজ্জনক’ কোনো সংযুক্তি ডাউনলোডের শর্ত না দিয়েই দূরবর্তী জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে এটি।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স এনএসও’র মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

সিটিজেন ল্যাব বা মাইক্রোসফট কেউই কোয়াড্রিমের সফটওয়্যারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে না পারলেও, এই ধরনের অভিযোগ কোম্পানির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আন্তর্জাতিক স্পাইওয়্যার শিল্পের ওপর ক্র্যাকডাউনের ঘোষণার পরপরই এইসব প্রতিবেদন প্রকাশ পেল। বৈদেশিক দমনমূলক সরকারগুলো এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, এমন শঙ্কায় বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার নজরদারি সফটওয়্যার কেনা বন্ধের উদ্দেশ্যে গত মাসে একটি নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউজ।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স হোয়াইট হাউজের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিক জবাব মেলেনি।

এনএসও’র বিরুদ্ধে সংবাদকর্মীদের ওপর নিজস্ব প্রযুক্তি অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়মিত এলেও কোয়াড্রিম সব সময়ই আড়ালে ছিল। কোম্পানির কোনো ওয়েবসাইটও নেই, যেখানে কোম্পানির বিভিন্ন ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। আর কর্মীদেরও নিজস্ব নিয়োগকর্তার কোনো সূত্রও সামাজিক মাধ্যমে রাখতে বারণ করেছে কোম্পানিটি, যা নিয়ে এর আগে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।