গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অবকাঠামোয় চীনের ‘ব্যাপক’ সাইবার নজরদারির খবর

দেশ দুটি একে অপরের ওপর নিয়মিত গুপ্তচরবৃত্তি চালালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোয় চীনের পরিচালিত অন্যতম বৃহৎ গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 10:54 AM
Updated : 25 May 2023, 10:54 AM

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে পরিবহন খাতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করছে চীনের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হ্যাকারদের একটি দল।

বুধবার বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়েছে পশ্চিমা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট।

এই গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাটি গুয়ামসহ দেশটির অধীনে থাকা বিভিন্ন দ্বীপ অঞ্চলকেও  লক্ষ্যবস্তু বানানোর কথা নিজস্ব এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাইক্রোসফট। কোম্পানিটি আরও যোগ করে, এই আক্রমণ থামানো ‘চ্যালেঞ্জিং’ হতে পারে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের ওপর নিয়মিত গুপ্তচরবৃত্তির কার্যক্রম চালালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোয় চীনের মাধ্যমে পরিচালিত অন্যতম বৃহৎ গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা।

এই প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মন্তব্য জানতে রয়টার্স যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

এই গুপ্তচরবৃত্তিতে কতগুলো মার্কিন সংস্থা আক্রান্ত হয়েছে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)’ বলেছে, কানাডা, নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য’সহ নিজেদের বিভিন্ন অংশীদারের পাশাপাশি মার্কিন সংস্থা ‘ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ লঙ্ঘন শনাক্তে কাজ করছে।

কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড সতর্ক করেছে, এমনকি তারা নিজেরাও এই হ্যাকিং কার্যক্রমের শিকার হতে পারে।

মাইক্রোসফটের বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ভোল্ট টাইফুন’ নামে অভিহিত করা এই চীনা হ্যাকার দলের ওপর তাদের ‘তুলনামূলক আত্মবিশ্বাস’ রয়েছে। কারণ তারা এমন সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে সংকট চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ অবকাঠামোয় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

“এর মানে তারা এমন সম্ভাবনার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে।” --যোগ করেন গুগলের সাইবার নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম ‘ম্যানডিয়ান্ট ইন্টেলিজেন্স’-এর ‘থ্রেট অ্যানালাইসিস’ বিভাগ প্রধান জন হাল্টকুইস্ট।

তিনি আরও যোগ করেন, চীনা এই কার্যক্রম একইসঙ্গে ‘বিশেষ ও ভীতিজনক’ কারণ এই দলের সক্ষমতা নিয়ে এখনও বিশ্লেষকদের পর্যাপ্ত ধারণা নেই।

“ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই ব্যবস্থা নিয়ে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি।”

স্বঘোষিত ‘গণতান্ত্রিক উপায়ে শাসিত তাইওয়ানের’ দাবিতে চীন সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, তাইওয়ানকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনিও শক্তি প্রয়োগে ইচ্ছুক।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনুমান বলছে, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালালে সে সময় হ্যাকাররা মার্কিন সামরিক বাহিনীর নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে শিকার বানাতে পারে।

‘এনএসএ’ ও অন্যান্য পশ্চিমা সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে, সংস্থাগুলোর জারি করা নির্দেশিকা ব্যবহারের মাধ্যমে তারা যেন বিভিন্ন ক্ষতিকারক কার্যক্রম শনাক্ত করে।

“গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো পরিচালকদের নিজস্ব সিস্টেমে লুকিয়ে থাকা আক্রমণকারীদের প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।” --এনএসএ’র সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেন্টার’-এর পরিচালক পল চিচেস্টার।

মাইক্রোসফট বলেছে, এই হ্যাকার দল ২০২১ সাল থেকেই সক্রিয় রয়েছে। আর যোগাযোগ, উৎপাদন, পরিষেবা, পরিবহন, অবকাঠামো নির্মাণ, সামুদ্রিক, সরকারী, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা’সহ বেশ কিছু সেক্টরকে শিকার বানিয়েছে এটি।

এনএসএ’র সাইবার নিরাপত্তা পরিচালক রব জয়েস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে ও নিজেদের কোনো চিহ্ন না রাখার উদ্দেশ্যে চীনা এই কার্যক্রমে বিভিন্ন ‘বিল্ট-ইন নেটওয়ার্ক টুল’ ব্যবহৃত হয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, এই ধরনের কৌশল শনাক্ত করা তুলনামূলক জটিল কারণ তারা বিভিন্ন এমন সক্ষমতা ব্যবহার করে, যা এরইমধ্যে ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত পরিবেশে বিদ্যমান’।

মাইক্রোসফট বলেছে, ক্ষতিকারক ফাইল ডাউনলোডের প্রলোভন দেখানোর মতো বিভিন্ন প্রচলিত হ্যাকিং কৌশল ব্যবহারের বিপরীতে এই দল তথ্য খুঁজতে ও ডেটা হাতিয়ে নিতে শিকারের বিদ্যমান সিস্টেমগুলো সংক্রমিত করে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরী অঞ্চলের মার্কিন সামরিক আবাসস্থল হলো গুয়াম। আর সম্ভাব্য যে কোনো ধরনের সংঘাতের প্রতিক্রিয়া জানানোর বেলায় এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। 

পাশাপাশি, একাধিক সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা যোগাযোগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত।

অস্ট্রেলিয়ার থিংক ট্যাংক হিসেবে বিবেচিত ‘অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এবং ওই অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় মদদে সাইবার আক্রমণ সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত বার্ট হুগেভিন বলেন, যৌক্তিক কারণেই এইসব সাবমেরিন কেবল গুয়ামকে চীনা সরকারের ‘গোয়েন্দা তথ্য খোঁজার লক্ষ্যবস্তু’ বানিয়েছে।

“সাবমেরিন কেবল যেখানে সমুদ্র থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসে, সেই ঘাঁটিগুলো উচ্চমাত্রার ঝুঁকি থাকে।” --বলেন তিনি।

নিউজিল্যান্ড বলেছে, নিজ দেশে সম্ভাব্য যে কোনো সাইবার হুমকি শনাক্তে কাজ করছে তারা।

“আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা যেসব হুমকির মুখে পড়ছি সে সম্পর্কে অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের সঙ্গে স্বচ্ছ থাকা ও অগ্রগামী ভূমিকা রাখা।” --বলেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র ও সাইবার নিরাপত্তা মন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল।

কানাডার সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, এখনপর্যন্ত এই হ্যাকিং কার্যক্রমে কানাডীয় নাগরিকদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ আসেনি।

“যাইহোক, পশ্চিমা অর্থনীতির দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।” --যোগ করে সংস্থাটি।

“আমাদের বেশিরভাগ অবকাঠামো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বিত। তাই একটি জায়গায় আক্রমণের প্রভাব অন্যান্য জায়গাতেও পড়তে পারে।”