এখনও সোয়াইপ করছেন, সঙ্গী পেয়ে গেছেন বা স্রেফ অ্যাপই ডিলিট করে দিয়েছেন- যেটাই হোক না কেন, ডেটিং অ্যাপের সঙ্গে সম্পর্ক এখন খুবই সাধারণ ঘটনা।
গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০ শতাংশ আমেরিকান টিন্ডার, গ্রাইন্ডার বা বাম্বলের মতো অ্যাপ ব্যবহার করেন প্রেম, সঙ্গী বা যৌনতার খোঁজে। এ নিয়ে আরও নানারকম তথ্য উঠে এসেছে পিউ রিসার্চের গবেষণায়।
আসুন দেখা যাক এ নিয়ে গবেষণার ডেটা কী বলে-
একলা লোকজন সব যায় কই?
প্রাপ্তবয়স্ক সিঙ্গলদের মধ্যে যাদের বয়স ৩০-এর কম, তাদের বেশিরভাগই অন্তত একটি হলেও ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। কিন্তু কোনটি? হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপ হচ্ছে টিন্ডার। অনলাইনে ডেট করা প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনীর ভরসার জায়গা সোয়াইপ কালচারের ঢেউ তোলা এই অ্যাপটি।
ম্যাচ এবং বাম্বল হল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জনপ্রিয় অ্যাপ। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী সিঙ্গল লোকজনকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় টিন্ডার এবং বাম্বল-এ। বয়স যাদের ৫০, মানে যারা নির্ভরতা খোঁজেন তাদের ভরসার জায়গা ‘ম্যাচ’ এবং ‘ই-হারমোনি’। আর বয়স নির্বিশেষে সব মিলিয়ে যারা অনলাইন ডেটে আগ্রহী তাদের মধ্যে শতকরা ৩৫ জন অ্যাপের সাবস্ত্রিপশন ফি বা অন্যান্য সুবিধার জন্য অর্থ খরচ করার করার কথা জানিয়েছেন।
বিপরীতলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্টদের তুলনায় লেসবিয়ান, সমকামী এবং উভকামী লোকজনদের মধ্যে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা সামান্য বেশি দেখা গেছে। এরা সাধারণত টিন্ডার এবং গ্রাইন্ডারের ভক্ত। বলে রাখা ভাল, গ্রাইন্ডার মূলত সমকামীদের জন্য তৈরি অ্যাপ।
গবেষণায় নজর ছিল ডেটিং অ্যাপের দুনিয়ায় আটটি বড় অ্যাপের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওকেকিউপিড’, ‘ই-হারমোনি’, ‘হিঞ্জ’, ‘গ্রাইন্ডার’ ও ‘হার’।
তবে বিশেষায়িত অ্যাপগুলোও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। প্রায় ৩১ শতাংশ ব্যবহারকারী রয়েছে এদের আওতায়। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো অ্যাপ হচ্ছে ‘আওয়ার টাইম’ যার লক্ষ্য ৫০ বছর বা এর বেশি বয়সীরা। আরও আছে খ্রিষ্টান ব্যবহারকারীদের জন্য ‘প্লেন্টিঅফফিশ’ এবং ‘ক্রিশ্চিয়ান মিঙ্গল’। এর পাশাপাশি আছে ‘ফেইসবুক ডেটিং’।
ডেটিং অ্যাপে লোকজন খোঁজেন কী?
কোনো কোনো অ্যাপের বেলায় ‘মেইক আউট’ বা ‘রুম ডেট’ কি সমর্থক শব্দ? অনেকেই মনে করেন টিন্ডার অ্যাপটি ব্যবহারের লক্ষই হলো দ্রুততম সময়ে কাছাকাছি এলাকায় পছন্দসই যৌনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া। গবেষণা বলছে, অনলাইনে ডেট খোঁজেন এমন লোকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই আদতে খোজেন পছন্দসই জীবনসঙ্গী।
৪০ শতাংশ খোঁজেন ‘ক্যাজুয়াল ডেট’ - এরা স্রেফ সময় কাটানোর জন্য ডেট করেন, কোনও দীর্ঘমেয়াদী আশা ছাড়াই। প্রতি চার জনে একজন বা ২৪ শতাংশ চান যৌন সম্পর্ক, আর ২২ শতাংশ শুধু বন্ধুত্বে আগ্রহী।
তবে, যৌন সম্পর্ক চাওয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি।
আসলেই কি ডেটিং অ্যাপে জীবনসঙ্গী মেলে?
আপনি যদি জীবনসঙ্গী খোঁজেন, অনলাইন ডেটিংয়ে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা? অর্ধেকের বেশিই মনে করেন, ডেটিং অ্যাপে জীবনসঙ্গী পাওয়া বরং সহজ। আর এ বিষয়ে বয়ষ্কদের চেয়ে অল্পবয়সীরা অনেক বেশি আশাবাদী। গবেষণা অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক যুগলদের প্রতি ১০ জনে এক জন অনলাইন ডেটিংয়ে সঙ্গী পাওয়ার কথা বলেছেন।
অপেক্ষকৃত তরুণ বয়সী এবং লেসবিয়ান, সমকামী এবং উভকামী ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির হার বেশি দেখা গেছে। ৩০-এর নিচের বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশই সঙ্গী পেয়েছেন অনলাইনে। লেসবিয়ান, সমকামী এবং উভকামী উত্তরদাতাদের মধ্যে এটি ২৪ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৬৯ জনই নিজেদের বর্ণনা করেছেন ‘সম্পর্কে জড়িয়ে’ আছেন হিসাবে। সেটা বিয়ে, লিভ-ইন পার্টনার বা অন্য কোনোভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সঙ্গীর কথা বলেছেন তারা।
কারা নিরাপদ বোধ করেন অনলাইন ডেটিংয়ে?
নিরাপত্তা আর অভিজ্ঞতার প্রশ্নে অনলাইন ডেটিংয়ের ফলাফল নানা ভাগে বিভক্ত পাওয়া গেছে। ৫৩ শতাংশই বলেছেন, ডেটিং অ্যাপ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক। আর ৪৬ শতাংশ ফিরেছেন খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অনলাইন ডেটিংয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি। অনলাইনে ডেট করতে গিয়ে যারা অবাঞ্ছিত যৌন বার্তা বা ছবি পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী। পিউ-এর হিসাব বলছে, অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরও গালিগালাজ বা শারীরিক ক্ষতির হুমকির কথা নারীরা শুনেছেন অনেক বেশি।
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ এই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। একই বয়সসীমার পুরুষদের মধ্যে এই হার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। আগ্রহীদের কাছ থেকে মেসেজ পাওয়ার সংখ্যা নারীদের বেলায় ‘চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো’ বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।
শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে আপত্তিকর ছবি বা মেসেজ পাঠানোর হার বেশি দেখা গেছে। অপরদিকে, লেসবিয়ান, গে এবং উভকামীদের বেলায় নিপীড়নের হার ছিল বেশি।
সামগ্রিকভাবে, কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক এবং এশিয়ান প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গ ব্যবহারকারীরা অনলাইনে নিরাপদ ডেটিং অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
ডেটিং অ্যাপ থেকে দেখা করার বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’ মনে করেন না এমন সংখ্যা পুরুষদের মধ্যে ৪১ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ।
তবে, অধিকাংশই বলেছেন, অনলাইন ডেটিং প্রোফাইল তৈরির সময় অ্যাপগুলোর উচিত ব্যবহারকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা।