অ্যাপলের দিকে ‘টুইটারাস্ত্র’ তাক ইলন মাস্কের

মাস্ক ডজনখানেক টুইটে অ্যাপলের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযোগ তুললেও, শেষ কথা হিসেবে বলেছেন অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের ৩০ শতাংশ ফি-এর কথা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 01:19 PM
Updated : 29 Nov 2022, 01:19 PM

বাজারমূল্যের হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানির ওপর ‘আক্রমণ’ চালাতে এবার পকেটের অস্ত্র ব্যবহার করছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

বিজ্ঞাপন, কনটেন্ট মডারেশন এবং অ্যাপ স্টোর ফি প্রশ্নে বাজারের দুই শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল-গুগলের সঙ্গে মাস্কের টুইটারের পথ সাংঘর্ষিক– বাজার বিশ্লেকরা এমন আশঙ্কা করছিলেন কদিন ধরেই। মাস্কের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে।

মাস্ক সোমবারেই টুইট করে অ্যাপলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, মাইক্রোব্লাগিং প্ল্যাটফর্মটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাপল। আইফোন নির্মাতা নিজস্ব অ্যাপ স্টোর থেকে টুইটার অ্যাপ মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে কি না –প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের সহ-সম্পাদকের এ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন মাস্ক।

চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, মাস্কের সেই উত্তরের ঠিক নিচেই ছিল অ্যাপলের বিজ্ঞাপন। কিন্তু সোমবারের অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্য এখনও দেননি মাস্ক।

তবে, অ্যাপল প্রধান টিম কুককে ট্যাগ করে টুইট করেছেন, “হচ্ছেটা কী এখানে?”

মাস্কের টুইটের পাশেই যে অ্যাপল পণ্যের বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছিল সে বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রযুক্তি ব্লগারদের। চিফ টুইটকে ট্যাগ করে তার টুইটের পাশেই থাকা অ্যাপল বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশন পোস্ট করেছেন এক ব্লগার; মিম পোস্ট করে রসিকতা করতে ছাড়ছেন না বাকিরা।

টুইটারে মাস্কের সাম্প্রতিক ‘হম্বিতম্বি’ নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি অ্যাপল। মাস্কের অধীনে যাওয়ার পর টুইটারের জনসংযোগ বিভাগ কার্যত বিলুপ্ত হওয়ায় মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটির কাছ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানতে পারেনি প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।

আরও পড়ুন

Also Read: অ্যাপল-গুগলের সঙ্গে সংঘাতের পথে মাস্কের টুইটার?

অ্যাপল ‘বাকস্বাধীনতা বিরোধী’ বলে টুইট করেছেন মাস্ক। কিন্তু টুইটার ২৭ অক্টোবর বিশ্বের শীর্ষ ধনীর নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকেই প্ল্যাটফর্মটিতে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং হয়রানির মাত্রা লক্ষ্যণীয় হারে বাড়ায় ইতোমধ্যেই প্ল্যাটফর্মটি থেকে পিছু হটেছেন বিজ্ঞাপনদাতাদের অনেকে।

মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোম্পানির জনবলের একটা বড় অংশ কেবল ছাঁটাই করেননি; নানা কারণে নিষিদ্ধ হওয়া বিতর্কিত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টও ফেরত দিতে শুরু করেছেন; যার মধ্যে আছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে প্রথমসারির সবগুলো সামাজিক মাধ্যম থেকে একযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প, প্রাণহানিও হয়েছিল সে দাঙ্গায়।

মাস্কের অধীনে টুইটার অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছে রিপাবলিকান দলের জনপ্রতিনিধি মারজোরি টেইলর গ্রিন। কোভিড মহামারী নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করে জানুয়ারি মাসেই টুইটারে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।

মাস্ক সোমবার ডজনখানেক টুইটে অ্যাপলের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযোগ তুললেও, শেষ কথা হিসেবে বলেছেন অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের ৩০ শতাংশ ফি-এর কথা। অ্যাপ স্টোরের অ্যাপে ডেভেলপাররা যে ডিজিটাল পণ্য ও সেবা বিক্রি করেন, সেই লেনদেনের ৩০ শতাংশ কেটে রাখে অ্যাপল। আর অ্যাপ স্টোর ফি’র এ ‘উচ্চহার’ নিয়ে মাস্ক গড়িমসি করছেন বেশ কদিন ধরেই।

সম্প্রতি ‘টুইটার ব্লু’ সেবার দাম বাড়িয়ে পাঁচ ডলার থেকে আট ডলারে নিয়েছেন মাস্ক। প্রথমে এই সেবার খরচ ২০ ডলারে নিতে চাইলেও ব্যবহারকারীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে আট ডলারে থিতু হয়েছেন তিনি।

কারও অ্যাকাউন্টে নীল ‘টিক মার্ক’ দেওয়ার আগে স্বাধীনভাবে তার পরিচয় যাচাই করতো টুইটার। কিন্তু মাস্কের অধীনে পাল্টে গেছে সে কার্যপ্রণালী। পয়সা খরচ করে সুপরিচিত ব্যক্তি ও প্রথমসারির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ‘টুইটার ব্লু’-এর টিক চিহ্ন নিচ্ছিল প্রতারকরা। খোদ মাস্কের নামেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালু করেছিল সাইবার অপরাধীরা।

বাণিজ্য প্রকাশনা ফাইনানশিয়াল টাইমস বলছে, টুইটারে বিজ্ঞাপনী খরচের লাগাম টেনেছে যে কোম্পানিগুলো, সম্ভবত সেই কোম্পানিগুলোর প্রধানদের জনসমক্ষে হেনস্তা করে ক্ষোভ ঝাড়ার চেষ্টা করছেন মাস্ক।

বিজ্ঞাপনদাতাদের অনেকেই শীর্ষ ধনকুবেরে সঙ্গে ঝগড়া এড়াতে ‘যতোটুকু না করলেই নয়’, বিজ্ঞাপনী খরচ কেবল ততোটাই কমিয়েছেন বলে মন্তব্য বাণিজ্য প্রকাশনাটির।