গ্রিডের নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করার বদলে গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, এর ব্যবহার কমিয়ে সম্ভাব্য জরুরী সময়ের জন্য ওই বিদ্যুতের উৎস টিকিয়ে রাখা অর্থবহ হবে।
Published : 06 Nov 2023, 03:14 PM
কেবল ছাদে সৌর প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমেই ইউরোপে তিন কোটির বেশি বাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যেতে পারে – এমন হিসাব উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
জার্মানির পাবলিক ইউনিভার্সিটি ‘কার্লস্রুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র গবেষকদের অনুসন্ধান বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপে চার কোটি ১০ লাখ বাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি কেবল সৌর প্যানেল ও ব্যাটারি ব্যবহার করার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারত। অনুমান অনুসারে, ২০৫০ সাল নাগাদ এ সম্ভাবনার আওতায় আসবে ৭৫ শতাংশ বাড়ি।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌর প্রযুক্তিতে অগ্রগতির মানে দাঁড়ায়, একটি পরিবার বসবাস করে এমন বাড়িগুলোর আর্থিক খরচ কমিয়ে আনার বেলাতেও এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে, যেখানে আসন্ন দশকগুলোয় বৈদ্যুতিক গ্রিডের ওপর তাদের নির্ভরতাও পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলা যাবে।
তবে, গ্রিডের নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করার বদলে গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, এর ব্যবহার কমিয়ে সম্ভাব্য জরুরী সময়ের জন্য ওই বিদ্যুতের উৎস টিকিয়ে রাখা অর্থবহ হবে।
“আমাদের ফলাফলে দেখা গেছে, ২০৫০ সালেও গ্রিড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতা আর্থিকভাবে বাস্তবসম্মত হবে না। তবে, সৌর শক্তির মতো ব্যবস্থা যোগ করলে ছোট বাড়িগুলো শক্তিস্বনির্ভর হতে পারবে।” --বলেন কার্লস্রুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র ‘এনার্জি ইকোনমিকস’ বিভাগ ও এ গবেষণার গবেষক ম্যাক্স ক্লাইনব্রাম।
“বেশিরভাগ বাড়ি বৈদ্যুতিক গ্রিড থেকে সরে এলে অবশ্য এর কার্যকারিতাও কমে আসবে।”
গবেষণাটি সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘টু মিলিয়ন ইউরোপিয়ান সিঙ্গেল ফ্যামিলি হোমস কুড অ্যাবানডন দ্য গ্রিড বাই ২০৫০’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জউল’-এ।
সেপ্টেম্বরে বার্লিনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘মেরকাটর রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন গ্লোবাল কমন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ (এমসিসি)’র প্রকাশিত হিসাব অনুসারে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সৌর প্যানেলের দাম অনেক কমেছে, যার মধ্যে গত দশকেই সৌর শক্তির পেছনে খরচ কমেছে ৯০ শতাংশের বেশি।
গবেষণার মূল লেখক ফেলিক্স ক্রুতজিগের মতে, খরচ কমে আসার মানে হতে পারে, ২০৫০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বের বিদ্যুৎ চাহিদা ‘পুরোপুরি ও সাশ্রয়ী উপায়ে পূরণ করতে পারে সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি’।
এদিকে, গত মাসে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অফ এক্সটার ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের চালানো আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সৌর শক্তি প্রযুক্তি ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতায়’ পৌঁছে গেছে। আর আগামী তিন দশকের মধ্যে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ শক্তির মূল উৎস হয়ে উঠবে এটি।
“নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে সাম্প্রতিক অগ্রগতির মানে দাঁড়ায়, জীবাশ্ম জ্বালানী বিষয়ক অনুমান এখন আর বাস্তবসম্মত নয়।” – বলেন ইউনিভার্সিটি অফ এক্সটার-এর গবেষক ফেমকে নিজসে।
“আমরা তিনটি মডেলের গতিবিধি পরীক্ষা করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমাদের অনুমান বলছে, এ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতে রাজত্ব করবে সোলার পিভি।”