চেহারা শনাক্তে ১০ লাখ বার এআই ব্যবহার মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

সমালোচকরা বলছেন, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ক্লিয়ারভিউ’র প্রযুক্তি ব্যবহার কার্যত সবাইকে ‘বাহিনীর নজরদারির আওতায়’ নিয়ে আসে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 08:49 AM
Updated : 28 March 2023, 08:49 AM

মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রায় ১০ লাখ বার অনুসন্ধান চালিয়েছে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ ভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ক্লিয়ারভিউ এআই’। 

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হোয়ান টন-দ্যাট বিবিসি’কে বলেন, ক্লিয়ারভিউ’র কাছে এমন তিন হাজার কোটি ছবি আছে, যেগুলো ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ফেইসবুকের মতো বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম থেকে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমাগত কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানার মুখে পড়েছে কোম্পানিটি।

সমালোচকদের যুক্তি, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ক্লিয়ারভিউ’র প্রযুক্তি ব্যবহার সবাইকে ‘বাহিনীর নজরদারির আওতায়’ নিয়ে আসে।

“যখনই তাদের কাছে কোনো সন্দেহভাজনের ছবি থাকে, তারা এটা আপনার চেহারার সঙ্গে মেলাবে।” --বলেন অলাভজনক সংস্থা ‘ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের’ জ্যেষ্ঠ নীতি বিশ্লেষক ম্যাথিউ গুয়ারাগিলিয়া।

বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী গ্রাহককে কোনো চেহারার ছবি আপলোডের পাশাপাশি ক্লিয়ারভিউ’র সিস্টেম কোম্পানির সংগ্রহ করা হাজার কোটির বেশি ছবি থেকে মেলানোর সুযোগ দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন মিলে যাওয়া ছবি’র অনলাইন লিংকও সরবরাহ করে। এর ফলে, ক্লিয়ারভিউ বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ও নির্ভুল ফেসিয়াল রেকগনিশন কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত।

অলাভজনক সংস্থা ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’ ইলিনয়ের অঙ্গরাজ্যের আদালতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করার পর বেশিরভাগ মার্কিন কোম্পানির কাছেই ক্লিয়ারভিউ’র বিভিন্ন পরিষেবা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে, এর ব্যতিক্রম ঘটে কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেলায়। টন-দ্যাটের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা তার সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন।

সফটওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে নিয়মিত কোনো তথ্য প্রকাশ করে না মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর পোর্টল্যান্ড, স্যান ফ্রান্সিসকো ও সিয়াটল’সহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু শহরে এটি নিষিদ্ধ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেহারা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার নিয়ে প্রায়শই জনসাধারণের কাছে প্রচারণা চালানো হয় যে এগুলো কেবল গুরুতর বা হিংসাত্মক অপরাধ শনাক্তে ব্যবহৃত হয়।

ক্লিয়ারভিউ’র কার্যকারিতা সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দেওয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে ‘মায়ামি পুলিশ’ বলেছে, খুন থেকে শুরু করে দোকানে চুরি, সকল ধরনের অপরাধ শনাক্তে তারা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন।

শহরটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহকারী প্রধান আরমান্ডো অ্যাগুইলার বলেন, তার দল বছরে প্রায় সাড়ে চারশবার এই সিস্টেম ব্যবহার করেছে। আর বেশ কিছু খুনের ঘটনা সমাধানে সাহায্য করেছে এটি।

অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই টুল ব্যবহারের বিপরীতে কোনো আইন নেই বললেই চলে।

আগুইলার বলছেন, মায়ামি’র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই টুলকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করে।

“কোনো অ্যালগরিদম বললেই আমরা গ্রেপ্তার করি, বিষয়টি এমন নয়।” --বলেন তিনি।

“আমরা হয় সেই নাম কোনো ফটোগ্রাফিক লাইন-আপে রাখি অথবা প্রচলিত কোনো উপায়ে মামলার সমাধান করে থাকি।”