জরিপ: এআই মানবতার জন্য হুমকি মনে করেন ৬১ শতাংশ মার্কিনী

“পারমাণবিক যুগ শুরু হওয়ার সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির কোনো তফাত নেই, এআই ঝুঁকি নিয়ে দৃঢ় জনসচেতনতা কর্যকরী পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 10:06 AM
Updated : 19 May 2023, 10:06 AM

বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক মনে করছেন তীব্রবেগে এগিয়ে আসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মানবতার জন্য হুমকি ডেকে আনবে।

এমনটাই উঠে এসেছে বুধবার প্রকাশিত রয়টর্স ও বাজার গবেষণা সংস্থা ইপসসের মিলিত এক জরিপে।

ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পরপর ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি হিসাবে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষের জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়েছে। শুরু থেকেই বিতর্কের শীর্ষে থাকা চ্যাটজিপিটি এক নতুন প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছে। সেই দৌড়ে মাইক্রোসফট গুগলের মতো শীর্ষ কোম্পানিগুলো নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে লড়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষদের ছাপিয়ে প্রাণপনে টিকে থাকতে।

এআই এর ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে সঙ্গে খোদ কোম্পানিগুলোও প্রযুক্তিটি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই এর সিইও মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেন।

“দৈত্যটিকে আর চেরাগের ভেতরে ফিরিয়ে নেওয়ার পথ নেই, এটি সারা বিশ্বে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে” এআই ঝুঁকি নিয়ে মঙ্গলবার মার্কন সিনেট প্যানেলের আলোচনায় এমনটাই বলেন মার্কিন সিনেটর কোরি বুকার।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ৬১ শতাংশ এআই প্রযুক্তিকে মানুষের জন্য হুমকি মনে করছেন, যেখানে ২২ শতাংশ ভিন্ন মত দিয়েছেন। আর, শতকরা ১৭ ভাগ জানিয়েছেন তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন।

২০২০ সালে ডনাল্ড ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ঝুঁকি নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছন, জো বাইডেনের ভোটারদের বেলায় তা ছিলো ৬০ শতাংশ।

ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতায়ও হয়েছে হেরফের। কট্টরপন্থী খ্রিস্টানদের বেলায় তা ৩২ শতাংশ, আর উদারপন্থীদের এই হার ২৪ ভাগ।

“জরিপটি থেকে বোঝা যাচ্ছে আমেরিকানদের একটা বড় অংশ প্রযুক্তিটির নেতিবাচক দিক নিয়ে উদ্বিগ্ন।” - বলছিলেন ‘ইউএস পলিসি অফ ফিউচার লাইফ ইন্সটিটিউট’ এর পরিচালক ল্যানডন ক্লেইন। এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগেই ছয় মাস পর্যন্ত এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন স্থগিত করতে একটি উন্মুক্ত প্রত্র প্রকাশ করা। ইলন মাস্কসহ সেখানে এখন পর্যন্ত সাক্ষর করেছে ২৭ হাজার পাঁচশো ৬৫ জন সচেতন নাগরিক।

ল্যানডেন আরো বলেন, “পারমাণবিক যুগ শুরু হওয়ার সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির কোনো তফাত নেই, এআই ঝুঁকি নিয়ে দৃঢ় জনসচেতনতা কর্যকরী পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।”

রয়টর্সের খবর বলছে, আমারেকান জনগণ তাদের প্রাত্যহিক জীবনের সংকটের চাইতেও এআই, অপরাধ ও অর্থনীতি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৭৭ ভাগ অপরাধ দমনে তহবিল বৃদ্ধিকে সমর্থন করছেন এবং ৮২ শতাংশ অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

এআই শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মানুষের এআইয়ের সুবিধাগুলো আরো ভালভাবে জানা উচিৎ।

“সতর্কতাটা যৌক্তিক, কিন্তু শুরুতেই নেতিবাচক কথা আসছে কেন?” বলেছেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক একইসঙ্গে গুগল এক্স’এর নির্মাতা সিবাস্তিয়ান টেহরুন। তিনি আরও বলেন, “এআই মানুষের জীবনমানকে উন্নত করবে, মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে মানুষকে আরো যোগ্য করে তুলবে।”

নতুন ঔষধ আবিষ্কারের মতো এআইয়ের যুগান্তকারী অর্জনগুলো চ্যাটজিপিটির মতন এতোটা সামনে আসছে না, বলেছেন ইউসি বার্কলি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং অ্যানিস্কেল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়ন স্টইকা।

তিনি আরও বলেন “আমেরিকানরা হয়তো এখনো জানে না, ইতোমধ্যেই প্রাত্যহিক জীবনে বাড়ি ও কর্মক্ষেত্র উভয় স্থানেই তারা কতটা অপরিহার্য ভাবে ব্যবহার এআই করছে।”

৯ মে থেকে ১৫ মে’র মধ্যে করা এই জরিপটিতে চার হাজার চারশো ১৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান অংশ নিয়েছেন। জরিপকারীরা বলছেন নির্ভুলতার হার কমবেশি দুই শতাংশ।