হুয়াওয়ে’র এই রৌদ্রজ্জল অবস্থান গত বছরে কোম্পানির এক নির্বাহী কর্মকর্তার মন্তব্যের সঙ্গে মিলে গেছে। তিনি বলেছিলেন কোম্পানির ‘বেঁচে থাকার লড়াই এখনও শেষ হয়নি’।
Published : 30 Dec 2023, 02:20 PM
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শিল-পাটার যুদ্ধে মরিচের অবস্থায় পড়া চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে বলছে, একটি শক্তপোক্ত ২০২৩ সাল কাটানোর মাধ্যমে তারা আবারও ‘ট্র্যাকে ফিরে এসেছে’।
এ বছরে নয় হাজার ৯০০ কোটি ডলার আয় আশা করছে বলে গেল শুক্রবার বলেছে চীনা শহর শেনজেনভিত্তিক এ কোম্পানি। এই আয়ের একটি অংশ আসবে কোম্পানির ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় আশাতীত আয় থেকে। ২০২২ সালে রেকর্ড করা নয় হাজার ২৪০ কোটি ডলার থেকে এক লাফে আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ।
তবে, এ আয় ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের চেয়ে অনেক কম।
“কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর আমরা ঝড়ঝাপ্টা মোকাবেলা করতে পেরেছি। এবং এখন আমরা অনেকটাই ট্র্যাকে ফিরে এসেছি।” – বছরের শেষ বার্তায় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু।
কোম্পানিরটির এ শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে গত অগাস্টে ‘হুয়াওয়ে মেইট ৬০ প্রো’ স্মার্টফোনটি উন্মোচনের পর থেকে। এই স্মার্টফোনটি বিশেষজ্ঞদের হতবাক করে দিয়েছিল। চীনের চিপ কার্যকারীতা কমানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এতো প্রচেষ্টার পরেও কোম্পানিটির কাছে এমন উন্নত ডিভাইস তৈরির প্রযুক্তি কীভাবে এলো সে বিষয়টি তারা বুঝতে পারেননি বলে একটি প্রতিবেদনে লিখেছে সিএনএন।
স্মার্টফোনটি গ্রাহকেরা সাদরে গ্রহন করে, এবং হুয়াওয়েকে চীনের শেয়ার বাজার থেকে অ্যাপলের শেয়ার ছিনিয়ে নিতেও সাহায্য করে বলে উঠে এসেছে বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ-এর গবেষণায়।
সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত হুয়াওয়ে চীনা শেয়ার বাজারে পঞ্চম স্থানে ছিল। বছরের প্রথম প্রান্তিকের ১০ শতাংশ থেকে তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার বেড়ে ঠেকেছে ১৪ শতাংশে। ওই একই সময়ের মধ্যে অ্যাপলের শেয়ার ২০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে।
হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবসার ফলাফল ‘প্রত্যাশা ছাড়িয়ে’ গিয়েছে, কোন বিশদ বিবরণ না দিয়ে বার্তায় বলেছেন হু।
চীনা কোম্পানিটি এক সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বিক্রেতা ছিল। তবে, সম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নিষেধাজ্ঞার ফলে স্মার্টিফোন তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় এ অবস্থান হারিয়েছে হুয়াওয়ে।
মার্কিন নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করেছেন, হুয়াওয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ছাড়াও, তারা অভিযোগ করেন চীনা সরকার কোম্পানিটির সরঞ্জাম ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে। কোম্পানিটি বারবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ওয়াশিংটনে কোম্পানির অবস্থান ঠিক করার চেষ্টা করছে।
তবে, এ বছরে এসে হুয়াওয়ে পথ ফিরে পেতে শুরু করেছে।
গেল মার্চে কোম্পানিটি বলেছে তারা ‘সংকটের বাইরে’ রয়েছে। পাশাপাশি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যবহার করতে না পারা উপাদানগুলোর বদলি খোঁজার বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে বলে জানায় হুয়াওয়ে।
এই টেক জায়ান্ট নতুন বছরেও সাফল্য অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ পেয়েছে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে।
পাশাপাশি, কোম্পানির নিজেস্ব হাইসিলিকন চিপ বিভাগের তৈরি ‘কিরিন চিপ’ ব্যবহার করে স্মার্টফোন উৎপাদন বাড়াবে হুয়াওয়ে। ‘মেইট ৬০ প্রো’-তে ব্যবহৃত প্রসেসর চিহ্নিত করে নভেম্বরের প্রতিবেদনে এমনটি অনুমান করেছেন কাউন্টারপয়েন্ট-এর বিশ্লেষকরা।
কোম্পানিটি নোভা-এর অধীনে নতুন ‘মিড-রেঞ্জ’ লাইনাপের ফোন উন্মোচন করেছে গেল মঙ্গলবারে। ফোনটির তুলনামূলক কম খরচের কারণে জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
হুয়াওয়ে’র এই রৌদ্রজ্জল অবস্থান গত বছরে কোম্পানির এক নির্বাহী কর্মকর্তার মন্তব্যের সঙ্গে মিলে গেছে। তিনি বলেছিলেন কোম্পানির ‘বেঁচে থাকার লড়াই এখনও শেষ হয়নি’।
“কঠোর পরিশ্রম আমাদের বেঁচে থাকতে ও বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু আমাদের সামনে এখনও গুরুতর চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।” – গেল শুক্রবার দেওয়া বার্তায় লেখেন হু।
হু আরও সতর্ক করেন যে ‘প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধের চলমান বৈশ্বিক প্রভাবের ফলে প্রচুর ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে।