ট্রাম্প বলেছেন, চীনের মতো অন্য কোনো দেশের কাছে ‘জিম্মি’ থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র।
Published : 15 Apr 2025, 04:06 PM
মোবাইল, কম্পিউটার ও সেমিকন্ডাকটরের মতো পণ্য চীন থেকে আমদানি করা হলেও এসব পণ্যের ওপর উচ্চহারের নতুন শুল্ক কার্যকর হবে না এমন ঘোষণার একদিন পরই এগুলোকে অন্য এক শুল্কনীতির আওতায় আনা হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ধারণা করা হচ্ছে, সেমিকন্ডাকটরকে টার্গেট করে মার্কিন আমদানির ওপর আরও ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপ করবেন ট্রাম্প।
কোটি কোটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে শক্তিশালী করে এমন ক্ষুদ্র বিভিন্ন চিপ বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
সেমিকন্ডাক্টর কী, কী এর ব্যবহার?
একই পণ্যের কখনও মাইক্রোচিপ, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি, কখনও সেমিকন্ডাকটর শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এর কেন্দ্রে আছে সিলিকনের মতো কাঁচামাল।
ডোপিং নামের এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব চিপকে পরিবর্তিত করা হয়। যাতে এগুলোর মধ্যদিয়ে কখনও কখনও বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যায় আবার নাও যেতে পারে। আর এ বিষয়টি এসব চিপকে ইলেকট্রনিক সুইচ হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা কম্পিউটারের ভাষায় শূন্য ও এক-এর বাইনারি কোড বোঝে। এর ওপর ভিত্তি করেই কম্পিউটিংয়ের সার্কিট তৈরি হয়।
স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো ডিভাইসের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রিমোট গাড়ির কি ও সেন্সরওয়ালা বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহৃত হয় এসব চিপ।
রাউটার, সুইচ ও যোগাযোগের বিভিন্ন অবকাঠামোতেও ব্যবহার হয় চিপের, যা ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড তৈরি করে বিশ্বজুড়ে সংযোগ ব্যবস্থাকে কার্যকর করে তোলে।
স্থায়িত্বের প্রসঙ্গে বায়ু টারবাইন ও বিভিন্ন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও চিপ ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন চিকিৎসা ডিভাইস ও টুলের পাশাপাশি পেসমেকার এবং ইনসুলিন পাম্পের মতো ইমপ্লান্টএবল প্রযুক্তিতেও কাজে লাগে চিপ।
কারা বানায় চিপ?
সেমিকন্ডাকটরের জন্য তাইওয়ানের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীন।
বিশ্বে ব্যবহৃত অর্ধেকেরও বেশি চিপ সরবরাহ করে দেশটির ‘তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’ বা টিএসএমসি।
কোম্পানিটির গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া, আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ও সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কার্যত ‘চিপ যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে টিএসএমসি।
টিএসএমসি’র পর বিশ্বের দ্বিতীয় চিপ সরবরাহকারী হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং।
কেন সেমিকন্ডাকটরের ওপর শুল্ক আরোপ করতে চান ট্রাম্প?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবর্তিত ‘পারস্পরিক’ শুল্কের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা।
শুক্রবার স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। যার মধ্যে ছিল চীনা আমদানির ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্কও।
তবে একদিনের ব্যবধানে তা পরিবর্তন করেন ট্রাম্প। এগুলোকে কেবল অন্য এক শুল্কনীতির আওতায় আনা হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, শিগগিরই তিনি আমদানি করা সেমিকন্ডাকটরের জন্যও শুল্ক হার ঘোষণা করবেন।
ট্রাম্প বলেছেন, “চিপ, সেমিকন্ডাকটরসহ অন্যান্য জিনিস আমরা আমাদের দেশেই তৈরি করতে চাই।”
অন্য কোথাও থেকে মাইক্রোচিপ উৎপাদন বা আমদানি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের সদস্যরা বলেছেন, আসন্ন তদন্তে এ বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন।
রোববার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশাল-এ ট্রাম্প বলেছেন, “আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্তে আমরা সেমিকন্ডাকটর ও পুরো ইলেকট্রনিক্স সরবরাহ চেইনের দিকে নজর দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেছেন, চীনের মতো অন্য কোনো দেশের কাছে ‘জিম্মি’ থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র।