“আমি ছিলাম একজন পুরনো চিন্তাধারার হ্যাকার। স্রেফ নিজের মেধা পরখ করে দেখা আর কৌতুহল মেটানোর জন্য এসব করেছি।”
Published : 23 Jul 2023, 06:25 PM
সাইবার সিকিউরিটির ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত হ্যাকার কেভিন মিটনিক মারা গেছেন। এক বছর ধরে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে তিনি লড়াই করছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
মিটনিকের বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
কিংবদন্তীতুল্য এই হ্যাকারের জীবন বা ঘটনা একাধিক হলিউডি সিনেমার জন্য কাহিনিসূত্র হিসাবে কাজ করেছে।
হ্যাকার হিসাবে কেভিন মিটনিক যখন বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তখন উইন্ডোজ ৯৫-এর যুগ মাত্রই শুরু হচ্ছে।
কথিত আছে, কিশোর কেভিন সফলভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন ‘নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেইস ডিফেন্স কমান্ডে’। সে ঘটনারই অনেকটা আভাস পাওয়া যাবে ম্যাথিউ ব্রডরিক অভিনীত “ওয়্যার গেইমস” সিনেমায়। যদিও ওই হ্যাকিংয়ের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন মিটনিক।
সিকিউরিটি সিস্টেমকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে মিটনিকের বিশেষ ক্ষমতা সকলের সামনে আসে ১৯৮৮ সালে। অভিযোগ, ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন থেকে ১০ লাখ ডলার মুল্যের সফটওয়্যার চুরি।
এক বছরের কারাবাস এবং তিন বছরের প্রবেশনে থাকার দণ্ড পান তিনি। কিন্তু প্রবেশনের শর্ত লঙ্ঘণের দায়ে ১৯৯৫ সালে তার বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মিটনিক গা ঢাকা দেন।
অভিযোগনামায় বলা হয় তিনি একাধিক কর্পোরেশন, মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন।
১৯৯৫ সালের নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের “মোস্ট ওয়ান্টেড কম্পিউটার অপরাধী” হিসাবে বর্ণনা করে। মিটনিক তখন দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পলাতক।
সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ লোকজনেরসহ প্রায় ২০ হাজার ক্রেডিট কার্ড নম্বরে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে ছিল এমনসব সফটওয়্যার চুরির অভিযোগ, যেগুলো বিভিন্ন করপোরেশনের ওয়্যারলেস কল ও বিলিংয়ের প্রাইভেসি রক্ষায় ব্যবহৃত হত। ওইসব কর্মকাণ্ডে কোটি কোটি ডলার ক্ষয়সাধনের অভিযোগও ছিল।
তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হলেও কোনোভাবেই প্রমাণ করা যায়নি যে কোনো আর্থিক লাভের জন্য তিনি ওইসব হ্যাকিংয়ের ঘটনা কাজে লাগিয়েছেন।
“আমি ছিলাম একজন পুরনো চিন্তাধারার হ্যাকার। স্রেফ নিজের মেধা পরখ করে দেখা আর কৌতুহল মেটানোর জন্য এসব করেছি।” -- ২০০৮ সালে ওয়্যার্ড ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন তিনি।
মিটনিকের সম্ভবত সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলো ছিল আইনের লোকজনের সঙ্গে তার চোর-পুলিশ খেলা সংশ্লিষ্ট।
১৯৯৩ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এফবিআই-এর লোকজন তাকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করছে সেটি জানতে হবে। সেটি করতে গিয়ে তিনি গোটা ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের টেলিফোন সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করেন ও এফবিআই-এর ফোনে আড়ি পাতেন। এর মাধ্যমে তদন্তকারীদের তিনি ভুলপথে ঠেলে দেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে এফবিআইয়ের লোকজন গিয়ে হাজির হয় এমন এক ঠিকানায় যেখানে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা এক নিরীহ দম্পতি বাড়িতে বসে টিভি দেখছেন।
আরেকবার রেডিও স্ক্যানার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে তিনি আবিষ্কার করেন, এফবিআই তার ওপর পাতা জাল গুটিয়ে আনছে। তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালিয়ে যান - এজেন্টদের জন্য রেখে যান এক বাক্স ডোনাট!
মিটনিক বিপত্তিতে পরেন আরেক হ্যাকারের ওপর হ্যাকিং ফলাতে গিয়ে। সুতোমু শিমোমুরা নামে ওই হ্যাকারই পরে পুলিশের সঙ্গে হাত মেলান এবং তাকে ধরিয়ে দেন।
৪৬ মাসের কারাবাস শেষে ২০০০ সালে তিনি মুক্তি পান মিটনিক।
জেল থেকে বেরোনোর পর তিনি মনোযোগ দেন সাইবার নিরাপত্তায়। সাইবার আক্রমণকারীদের খুঁজে বের করতে আক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করার জন্য মিটনিক নিজেকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার হিসাবে ঘোষণা দেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টু জোয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি দাঁড় করান সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি নোবিফোর।
“আমি কম বয়সে বোকার মতো অনেকগুলো ভুল করেছি এবং সেগুলো নিয়ে আমি অনুতপ্ত।” ২০০৫ সালে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন মিটনিক।
“তবে, আমি ভাগ্যবান যে আমি দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছি এবং নিজের দক্ষতা দিয়ে সমাজের উপকার করতে পারছি।”