এআই ব্যবস্থা ‘আটকে রাখার’ পিটিশনে মাস্কের স্বাক্ষর

“ক্ষমতাবান এআই সিস্টেম কেবল তখনই তৈরি করা উচিৎ, যখন আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে, এগুলোর প্রভাব ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি এর বিভিন্ন ঝুঁকিও মোকাবেলাযোগ্য হবে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 11:13 AM
Updated : 29 March 2023, 11:13 AM

ওপেনএআই’র নতুন চালু করা চ্যাটবট ‘জিপিটি-৪’র চেয়ে ক্ষমতাবান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা তৈরির কার্যক্রম ছয় মাস আটকে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইলন মাস্ক’সহ একদল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ ও শিল্প নির্বাহী।

অলাভজনক সংস্থা ‘ফিউচার অফ লাইফ ইনস্টিটিউট’-এর জারি করা এক খোলা চিঠিতে এই ব্যবস্থার কারণে সমাজ ও মানবতার ওপর সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। আর এতে মাস্কের পাশাপাশি এক হাজারের বেশি লোকজন স্বাক্ষর দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এই ধরনের ব্যবস্থার জন্য সুরক্ষা প্রোটোকল তৈরি, বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষার আগ পর্যন্ত উন্নত এআই ব্যবস্থা তৈরির কার্যক্রমে বিরতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় ওই চিঠিতে।

“বিভিন্ন ক্ষমতাবান এআই সিস্টেম কেবল তখনই তৈরি করা উচিৎ, যখন আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে, এগুলোর প্রভাব ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি এর বিভিন্ন ঝুঁকিও মোকাবেলাযোগ্য হবে।” --লেখা আছে চিঠিতে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিভিন্ন ‘মানব প্রতিযোগিতামূলক’ এআই সিস্টেমের মাধ্যমে সমাজ ও মানব সভ্যতার ওপর সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণী দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাতাদেরকে শাসক ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নীতিনির্ধারকদের সাথে কাজ করার আহ্বান রয়েছে ওই চিঠিতে।

‘স্ট্যাবিলিটি এআই’র প্রধান নির্বাহী ইমাদ মোস্তাক ও অ্যালফাবেট মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ‘ডিপমাইন্ডের’ গবেষকদের পাশাপাশি ইয়োশুয়া বেনজিও ও স্টুয়ার্ট রাসেলের মতো এআই হেভিওয়েটরাও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ট্রান্সপারেন্সি রেজিস্টার’-এর তথ্য বলছে, অলাভজনক সংস্থা ‘ফিউচার অফ লাইফ ইনস্টিটিউট’-এ প্রাথমিক অনুদান দিয়েছে মাস্ক ফাউন্ডেশন, লন্ডনভিত্তিক চ্যারিটি ‘ফাউন্ডারস প্লেজ’ ও ‘সিলিকন ভ্যালি কমিউনিটি ফাউন্ডেশন’।

গেল সোমবার ইইউ’র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ইউরোপোল’ চ্যাটজিপিটি’র মতো উন্নত এআই ব্যবস্থা নিয়ে নৈতিক ও আইনি উদ্বেগের আহ্বানে যোগ দেওয়ার সময় বিভিন্ন উদ্বেগের কথা উঠে আসে। আর এতে বিভিন্ন ফিশিং প্রচেষ্টা, ভুল তথ্য ছড়ানো ও সাইবার অপরাধের সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়েও সতর্ক করা হয়।

অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবনা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার।

গেল বুধবার প্রকাশিত নীতিমালা বিষয়ক এক নথিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে দেশটির সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা হয়। আর এই প্রযুক্তির জন্য নিবেদিত সংস্থা তৈরির বদলে মানবাধিকার, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে নিজস্ব নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালনার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ ছিল ওই নথিতে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছেন টেসলার ‘অটোপাইলট সিস্টেমের’ জন্য এআই ব্যবহার করা মাস্ক।

গত বছর মাইক্রোসফট সমর্থিত সফটওয়্যার কোম্পানি ওপেনএআই’র চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো একই ধরনের বিশাল ল্যাংগুয়েজ মডেল তৈরি ও নিজেদের পণ্যে জেনারেটিভ এআই একীভূত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

ফিউচার অফ লাইফের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, ওপেনএআই’র প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান চিঠিতে স্বাক্ষর দেননি। এই প্রসঙ্গে রয়টার্স ওপেনএআই’র মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

“এই চিঠি একেবারে নিখুঁত নয়, তবে এর প্রকৃত মানে ঠিকই আছে। আমরা যতক্ষণ এর বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে তুলনামূলক ভালোভাবে বুঝতে না পারি, ততক্ষণ আমাদের এর গতি কমাতে হবে।” --বলেন চিঠিতে স্বাক্ষর দেওয়া নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্যারি মার্কাস।

“এগুলো গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে…আর এই খাতের শীর্ষ খেলোয়াড়রা নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে ক্রমশ গোপনীয় হয়ে উঠছে, যা এর সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতের সুরক্ষার ব্যবস্থাকে জটিল করে তোলে।”