ভিন্ন ধাঁচের যেসব পণ্য এল এবারের সিইএস আয়োজনে

২০২৪ সালের সিইএস আয়োজনে বেশ কয়েকটি ছোট স্টার্টআপ কোম্পানির পণ্য এসেছে, যারা গ্রাহকদের ভিন্ন ধাঁচের প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করাতে আগ্রহী।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2024, 12:16 PM
Updated : 11 Jan 2024, 12:16 PM

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি মেলা ‘সিইএস’-এর এবারের আয়োজনে ল্যাপটপ ও গাড়িসহ হাজার হাজার চমকপ্রদ গ্যাজেট উন্মোচিত হয়েছে। তবে খানিকটা বিরল ও মূলধারার বাইরের পণ্যও দেখা গেছে এবারের আয়োজনে।

২০২৪ সালের সিইএস আয়োজনে বেশ কয়েকটি ছোট স্টার্টআপ কোম্পানির পণ্য এসেছে, যারা গ্রাহকদের ভিন্ন ধাঁচের প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করাতে আগ্রহী। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সহায়ক পণ্য, বাসা, কর্মক্ষেত্র বা পোষা প্রাণীর সমস্যা সমাধানে ব্যবহারযোগ্য পণ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত সিইএস আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেসব প্রযুক্তি পণ্যের ঘোষণার দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হল — 

ডট লুমেন চশমা

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে এবারের আয়োজনে নতুন স্মার্ট চশমা দেখিয়েছে রোমানিয়ার স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ডট লুমেন’।

কোম্পানির দাবি, এটি বানাতে স্বচালিত গাড়িতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে একটি হেডসেটে স্থাপন করা হয়েছে।

পাশাপাশি, এতে ‘হ্যাপটিক ফিডব্যাক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করায় হাঁটার সময় চশমার কম্পন বা ভাইব্রেশনের সহায়তায় রাস্তার নির্দেশনা পেয়ে থাকেন ব্যবহারকারী।

বর্তমানে পণ্যটি পরীক্ষামূলক ও উৎপাদন পর্যায়ে আছে। তবে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ডিভাইসটি পুরোপুরি বাজারে আনার প্রত্যাশা করছে কোম্পানিটি।

স্যামসাং ব্যালি

স্যামসাংয়ের এআই রোবট ‘ব্যালি’র প্রথম ঝলক দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালে। এটা ব্যবহারকারীকে বাড়িতে অনুসরণ করার পাশাপাশি তার দৈনন্দিন কাজেও সাহায্য করে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।

এ ছোট ও গোলাকার রোবটটিকে ঘরের ইলেকট্রিক রান্না সামগ্রীর সঙ্গে সংযোগ করা যাবে। এ ছাড়া, সেগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনেও সক্ষম রোবটটি। তবে এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর ভেতরে যোগ করা প্রজেক্টর, যা ব্যবহারকারীকে ভিডিও কলিংয়ের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি তাকে দূরের কোনো জায়গা থেকে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে।

ব্যালি’র মধ্যে প্রজেকশন প্রযুক্তি থাকায় এটা ব্যবহারকারীর সময়সূচীর ওপর ভিত্তি করে তাকে বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে ভিজুয়াল রিমাইন্ডার ও পরামর্শ দিতে পারে।

এ ছাড়া, ব্যবহারকারী ঘরের বাইরে থাকার সময় ঘরের দেখাশোনা এমনকি সহযোগী হিসেবেও কাজ করতে সক্ষম রোবটটি। স্যামসাং বলছে, এটি ব্যবহারকারীকে প্রিয়জন ও পোষা প্রাণীর ভিডিও’ও পাঠিয়ে থাকে।

চার বছর আগে পণ্যটি উন্মোচনের সময় গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। তবে এর পর থেকে মূলধারার প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সহায়ক ব্যবস্থা চলে আসায় এবারের সিইএস আয়োজনে অংশ নেওয়া দর্শকদের কাছে ব্যালি খুব ভালভাবে সমাদৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট।

স্মার্ট ক্যাট ফ্ল্যাপ

‘ক্যাট ফ্ল্যাপ’ হল এমন ছোট দরজা, যা বাড়ির মূল দরজার মধ্যে যুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে বাড়ির ভেতরে ও বাইরে আসা যাওয়ার সুবিধা পেয়ে থাকে ব্যবহারকারীর পোষা বিড়াল।

এবারের আয়োজনে নিজেদের নতুন ‘স্মার্ট ক্যাট ফ্ল্যাপ’ দেখিয়েছে সুইজারল্যান্ডের স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ফ্ল্যাপি’। একে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ক্যাট ফ্ল্যাপ বলে দাবি করছে কোম্পানিটি। পাশাপাশি, এতে ‘প্রে ডিটেকশন’ বা শিকার ধরে ফেলার সুবিধাও রয়েছে।

ডিভাইসটি এআই প্রযুক্তি ও এর মধ্যে থাকা ক্যামেরা ব্যবহার করে এটা শনাক্ত করে যে, ব্যবহারকারীর বিড়াল বাড়িতে কোনো শিকার ধরে নিয়ে আসে কি না। বিড়াল যদি কোনো শিকার ধরে আনে তবে এই ডিভাইসটি অস্থায়ীভাবে ফ্ল্যাপটি লক করে দেয় যাতে বিড়ালটি কোনো শিকার নিয়ে ঘরে ঢুকতে না পারে।

ফ্ল্যাপি একটি সহযোগী অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীকে নিজ পোষা প্রাণীর আচরণের ওপর নজর রাখতে ও দূর থেকে তার আদরের বিড়ালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণেও সাহায্য করে।

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ইউরোপীয় বাজারে আসবে সামনের বসন্তে।

র‌্যাবিট আর১

প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ পুরোপুরিভাবে বদলে দেওয়ার উপায় খুঁজছে স্টার্টআপ কোম্পানি র‌্যাবিট। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের সিইএস আয়োজনে ‘র‌্যাবিট আর১’ নামের ডিভাইস দেখিয়েছে কোম্পানিটি।

কমলা রঙের আয়তাকৃতির এ ছোট ওয়াকি-টকিতে একটি স্ক্রিন ও ক্যামেরা আছে। কোম্পানির দাবি, এর বিভিন্ন এমন স্মার্টফোনের জায়গা কেড়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেগুলো অনেক অ্যাপে ঠাসা ও এখন আর ব্যবহারযোগ্য নয়।

ফোনে অ্যাপ খোঁজার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী নিজের স্মার্টফোন স্ক্রল করার বদলে ‘র‌্যাবিট আর১’ ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এর এআই প্রযুক্তি ও ‘লার্জ অ্যাকশন মডেল (এলএএম)’ ব্যবহারকারীর ভয়েস প্রম্পটের মাধ্যমেই সে অ্যাপটি খুঁজে দিতে সাহায্য করে।

এ ধারণার মূল লক্ষ্য হল, অ্যাপ আইকনে ঠেসে থাকা বিভিন্ন স্মার্টফোনের পর্দাকে একটি ছোট ডিভাইসের আওতায় নিয়ে আসা, যাকে ‘সবচেয়ে সহজ কম্পিউটার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নির্মাতা কোম্পানিটি।