অ্যাপল নতুন আইফোনের মডেলগুলোর বেশ কিছু ফিচারকে ‘নতুন’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। ফিচারগুলো আইফোনের জন্য ‘নতুন’ হলেও, অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একেবারেই নয়।
Published : 13 Sep 2022, 05:55 PM
‘ফার আউট’ আয়োজনে নতুন আইফোন ১৪ এবং আইফোন ১৪ প্রো সংস্করণগুলো উন্মোচনের সময় অ্যাপল ডিভাইসগুলোর কিছু ফিচারকে ‘ব্রেকথু’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, অ্যাপল যে ফিচারগুলোকে আইফোনের জন্য ‘নতুন’ বলে উপস্থাপন করেছে তার অনেকগুলোই অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ফিচারগুলো আইফোনের জন্য ‘নতুন’ হলেও, এর মধ্যে ‘পিক্সেল বিনিং’ ফিচারটির উপস্থিতি আছে তুলনামূলক সস্তাদামের স্মার্টফোনেও।
অ্যাপলের আগেই ‘পিক্সেল বিনিং’ এনেছে অ্যান্ড্রয়েড
আইফোনের ইতিহাসে প্রথম হিসেবে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা পেয়েছে আইফোন ১৪ প্রো। গত বছরের আইফোন ১৩ প্রো এবং আইফোন ১৪-এর ‘বেইজ’ মডেলের তুলনায় পিক্সেল সংখ্যা চারগুণ বেশি প্রো সংস্করণের ডিভাইসগুলোর। কিন্তু ছোট ক্যামেরা সেন্সরে বেশি পিক্সেল আঁটার জটিলতা হচ্ছে, প্রতিটি পিক্সেলের জন্য যথেষ্ট আলো পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এর সমাধান হিসেবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২১, ওয়ানপ্লাস ৯ এবং শাওমি মি১১ আল্ট্রা স্মার্টফোনগুলো বেশ কিছু পিক্সেলকে একত্রিত করে একটি পিক্সেল হিসেবে কাজ করায়; ‘পিক্সেল বিনিং’ নামেই পরিচিত এ প্রক্রিয়াটি। সস্তা দামের স্মার্টফোনেও আছে এর উপস্থিতি। এর ফলে সেন্সরগুলো ‘হাই রেজুলিউশন’ ধরে রেখে আলোর কণাগুলো প্রসেস করতে পারে। ‘ফার আউট’ আয়োজনে ফিচারটি উপস্থাপনের সময়ে পণ্য ব্যবস্থাপক ভিতর সিলভা বলেছিলেন, “আইফোনে আনকোড়া নতুন শ্রেণির ক্যামরা আনছে” তার কোম্পানি। সিলভা এক্ষেত্রে অ্যাপলকে বাজারে ‘পিক্সেল বিনিং’-এর প্রবর্তক বলে দাবি না করে সতর্কতার প্রমাণ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।
ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন
স্মার্টফোনে ধারণ করা ভিডিওতে ফ্রেম কাঁপাকাঁপি পুরনো সমস্যা। ‘পোস্ট-প্রোসেসিং’-এর মতো প্রযুক্তিতে অগ্রগতির কারণে ২০২০ সালের গুগল পিক্সেল ৫ আর স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০-এ ‘অ্যাক্টিভ স্ট্যাবিলিটি’ আর ‘সুপার স্টেডি’ মোডের সুবাদে ডিভাইসগুলোর ক্রেতারা গোপ্রো অ্যাকশন ক্যামেরার কাছাকাছি স্থিতীশীল ফ্রেমে ভিডিও ধারণের সুযোগ পাচ্ছেন।
আইফোন ১৪-এর সবগুলো সংস্করণে উপস্থিত ভিডিও স্টেবিলাইজেশন ফিচারকে অ্যাপল নাম দিয়েছে ‘অ্যাকশন মোড’। তবে সিনেট বলছে, নমুনা বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে পুরো ফ্রেমের অনেকখানি ক্রপ করে ফেলবে ফিচারটি। ভিডিও স্টেবিলাইজেশনের বেলায় বিষয়টি বিরল না হলেও, নিজস্ব ডিভাইসে ফিচারটি আনার বেলায় অ্যাপল অন্তত বছর দুয়েক পিছিয়ে আছে।
অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে
অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে ফিচারটির বিভিন্ন সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে আছে বেশ ক’বছর ধরেই। ২০১৩ সালে বাজারে আসা লুমিয়া উইন্ডোজ ফোনের ‘স্ট্যান্ডার্ড ফিচার’ ছিল এটি। অ্যাপল, স্যামসাংয়ের আগে ফিচারটি নিজের আয়ত্বে এনেছিল দক্ষিণ কোরীয় হার্ডওয়্যার নির্মাতা এলজি।
এ ফিচারের সুবিধা হলো, ক্যালেন্ডারের ইভেন্টের মতো জরুরী তথ্যগুলো সব সময়েই ভেসে তাকে স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে। ডিসপ্লে দেখার জন্য বারবার ট্যাপ করতে অথবা বারবার স্পর্শ করতে হয় না ডিভাইস। ‘ফার আউট’ আয়োজনে অ্যাপলের বাজারজাতকরণ বিভাগের প্রধান গ্রেগ জসউইক বলেছেন, আইফোন ১৪ প্রো-এর সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লের এলটিপিও প্রযুক্তির সুবাদে এক হার্টজ রিফ্রেশ রেটে চালু থাকবে ডিসপ্লে, বিদ্যুৎ খরচও অনেক কম হবে।
কিন্তু সিনেট জানিয়েছে, এক্ষেত্রেও স্যামসাংয়ের চেয়ে পিছিয়ে আছে অ্যাপল। বছরের শুরুতে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে ঠিক একই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্ট।
‘ক্যাপসুল’ আকৃতির সেলফি ক্যামেরা কাটআউট
‘ক্যাপসুল’-এর মতো দেখতে সেলফি ক্যামেরা কাটআউটকে নতুন প্রজন্মের আইফোনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টগুলোর একটি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। আইফোন ১৪ প্রো এর মাধ্যমে পুরনো ‘নচ’-কে পেছনে ফেলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বিভিন্ন মডেলে উপস্থিত ক্যাপসুল আকৃতির কাটআউটের দিকে ঝুঁকছে বলে মন্তব্য করেছে সিনেট।
অ্যাপল ২০১৭ সালে আইফোন এক্স সংস্করণে ‘নচ’ যোগ করার পরপরই ডিভাইসটির নকশার এ বৈশিষ্ট নিয়ে রসিকতা করেছিল মার্কিন কোম্পানিটির শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং।
পরবর্তীতে ডিসপ্লের সামনের ‘নচ’ ছোট করার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতারা; কেউ কেউ ডিসপ্লেতে সেলফি ক্যামেরা বসাতে ‘পাঞ্চ হোল’ কৌশলও বেছে নিয়েছিলেন। গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৪-তে সেলফি ক্যামেরা ডিসপ্লের নিচে লুকিয়ে রাখার কৌশল বেছে নিয়েছিল স্যামসাং।
সবমিলিয়ে, অ্যাপল অবশেষে ‘ডিসপ্লে নচ’ নকশা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও অন্যদের তুলনায় বেশ কবছর পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছে সিনেট। অন্যদিকে ক্যাপসুল আকৃতির কাটআউটটিও নেহাত ছোট নয়। তবে, ‘ডায়নামিক আইল্যান্ড’ ফিচারটির কারণে কাটআউটটিকে কিছুটা হলেও ‘মেনে নেওয়া যায়’ বলে মন্তব্য করেছে সাইটটি। এক্ষেত্রে নোটিফিকেশনের ইউজার ইন্টারফেইসের সঙ্গে হার্ডওয়্যারের নকশার সমন্বয়ের জন্য অ্যাপলকে সাধুবাদ দিতেই হবে।